প্রকাশিত: ১৮/০১/২০২২ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত আরসা নামধারী ১১৪ জন সন্ত্রাসী আটক : এপিবিএন
# ২০ জনের নেতৃত্বে চলে নিষিদ্ধ আরসা।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এপিবিএন এর কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল উখিয়ার ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী অবস্থান নিয়েছে এবং তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই রোববার ভোররাতে ড্রোন ব্যবহার করে আর্মড পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয় মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ভাই মো. শাহ আলীকে (৫৫)। এমনটি জানিয়েছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আরসা নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর সাথে তার ভাই মো. শাহ আলীর যোগাযোগ ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে কোন ধরনের অপতৎপরতা আছে কিনা এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নাইমুল হক বলেন, ড্রোন দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পরবর্তীতে শাহ আলীকে আটক করার সময় সেখানে চোখ বাধা অবস্থায় সাদিকুল নামে একজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। সাদি কুলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তাকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন এবং  টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা দিতে না পারলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। পরবর্তীতে  ওই স্থান  থেকে অস্ত্র, ইয়াবা ও  টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আটক শাহ আলীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উখিয়া থানায় প্রেরণ করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে আটক দুষ্কৃতিকারী মো: শাহ আলীর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও অপহরণের দায়ে উখিয়া থানায় ৩টি মামলা রুজু করা হয়। যার নম্বর সমূহ ৬৭, ৬৮, ৬৯, তারিখ-১৬/০১/২০২২ইং।
আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে আরসা প্রধানের ভাই মো: শাহ আলীকে আদালতে প্রেরণ করা বলে জানায় উখিয়া থানার ওসি(তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক রিপোর্টে বলছে, সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা। মক্কায় থাকে এমন ২০ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি চালায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালেয়শিয়া এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।
সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ ‘আবু আম্মার জুনুনি’ নামেও পরিচিত। আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান। সেখানেই আতাউল্লাহর জন্ম। তিনি বেড়ে উঠেছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ইউটিউবে তার একটি ভিডিও থেকে ধারণ করা হয়। রাখাইনের রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে সেটি এবং আরবী, এই দুটি ভাষাই তিনি অনর্গল বলতে পারেন। ২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর ২০১৭ সালে আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তার নাম শোনা যায়।
২০১৭ সালে মিয়ানমার জান্তা সরকারের রোষানলে পড়ে নিজের ভূখণ্ড ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয় লাখো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য করা হয় ক্যাম্প। সেখানে বসবাসের শুরু থেকেই ‘আরসা’র নাম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপকমের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তখন নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবার থেকে অভিযোগ তোলা হয়,  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় মুহিবুল্লাকে আরসা’র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে।
রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মনে করে, আতাউল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগঠনটি মূলত মিয়ানমার সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে। ২০১৭ সালে তারা মিয়ানমারের পুলিশ ক্যাম্পে হামলার পরই জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু করে। এতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখো রোহিঙ্গা।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত তথাকথিত আরসা নামধারী ১১৪ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, চোরাচালানে জড়িত, ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আরও ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...