
সিএসবি২৪ ডেস্ক:
প্রদীপ কুমার দাশ ওসি হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে, তা বৈধ করার দায়িত্ব ছিল তার স্ত্রী চুমকির উপর। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিটির করা তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দুদক প্রদীপ ও চুমকির কাছে তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন এ ঘটনায় গতকাল রোববার সংস্থার চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
প্রদীপের স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিবৃতি অনুসারে, চুমকি তাদের সম্পদের বিবরণে দেখিয়েছেন যে তার বাবা তাকে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি দিয়েছেন। চুমকির দুই ভাই থাকলেও তারা বাবার কাছ থেকে তেমন সম্পদ পাননি-এমন তথ্য দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, ওই ভবন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তৈরি করেছেন। এবং তা গোপন করার জন্য তিনি এটি তার শ্বশুরের নামে করেছিলেন। তার শ্বশুর সেটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন। চুমকি একজন গৃহিণী।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিনি প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তখন থেকেই তিনি ব্যবসাকে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করছেন।
তিনি দাবি করেছেন, তার মাছের ব্যবসা ছিল। ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে তিনি তার মূলধন দেখান ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় দেখান তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা। চুমকির দাবিকৃত মাছের ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি তদন্তকারী দল। তিনি তার ব্যবসার কোনো লাইসেন্স বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে পারেননি। একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা নেননি। ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মাছের ব্যবসায় থেকে দেড় কোটি টাকা উপার্জনের কথা উল্লেখ করেছেন চুমকি।
২০০২ সালে বোয়ালখালীতে পাঁচটি পুকুর ১০ বছরের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় লিজ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০০২ সালে মাছ ব্যবসা শুরু করার জন্য বিনিয়োগের ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা কোথায় পেয়েছিলেন সে সম্পর্কে কোনো দলিল দেখাতে পারেননি তিনি।
অভিযোগে লেখা হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয় যে প্রদীপের অজস্র অবৈধ অর্থ গোপন করার জন্যই চুমকি ভুয়া মাছের ব্যবসা দেখিয়েছিলেন। মাছের ব্যবসা থেকে তিনি দেড় কোটি টাকা আয় করেছেন, এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশন আরও জানতে পারে, চুমকির স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টাকার এবং পারিবারিক ব্যয় হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকার। সেখানে তার বৈধ আয় মাত্র ৪৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে তিনি জ্ঞাত বহির্ভূত আয় করেছেন তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহাকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার পর প্রদীপকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় গত ৫ আগস্ট। গত ৬ আগস্ট তিনি কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। সূত্র : আমাদের সময়।
পাঠকের মতামত