csb24.com::
টানটান উত্তেজনা। রোমাঞ্চ চারদিকে। ম্যাচ জিততে না পারার আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের দরকার ১৮ রান। ৪০ রানে স্ট্রাইকে ম্যালকম ওয়ালার। নাসির হোসেন বোলার। প্রথম বলে ওয়ালার (৪০) আউট। দ্বিতীয় বলে নেভিল মাদজিভার ছক্কা, দ্বিতীয় বলে দুই রান, তৃতীয় বলে চার। ২ বলে ৬ রান দরকার! পঞ্চম বলে বিশাল ছক্কা মাদজিভার! বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিলো জিম্বাবুয়ে! শাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতে উল্লাসে মাতলো জিম্বাবুয়ে। ১৯ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচের হিরো মাদজিভা! ম্যাচের সেরাও তিনি। বাংলাদেশের সিরিজ জেতা হলো না। জয় দিয়ে বছর শেষ করা হলো না। সফরে একমাত্র ম্যাচ জিতলো জিম্বাবুয়ে। দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ এ ড্র করলো তারা। ট্রফি হলো ভাগাভাগি।
দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানে বাংলাদেশ। আসলে জোড়া আঘাত হানেন আল-আমিন হোসেন। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে সিকান্দার রাজাকে (৫) উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান তিনি। ঠিক পরের বলেই নতুন ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামসকে (০) বোল্ড করে দেন আল আমিন। হ্যাটট্রিক বলটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন আরভিন।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে আসেন বাঁ হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এই ওভারের দ্বিতীয় বলেই রেগিস চাকাভাকে (৪) তুলে নেন মুস্তাফিজ। তাকে তুলে মারতে গিয়ে সাব্বিরের তালুবন্দি হন চাকাভা। নাসির হোসেন আক্রমণে আসেন অষ্টম ওভারে। এবার আরভিন (১৫) রান আউট হন। পরের ওভারে আরাফাত সানিকে তুলে মারতে গিয়ে মাহমুদ উল্লার ক্যাচ হয়েছেন এল্টন চিগুম্বুরা (০)। ৩৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দারুণ বিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
এরপর বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে ওয়ালার ও জংবির ষষ্ঠ উইকেট জুটি। এই জুটি সফলভাবেই রান তাড়া করে চলছিল। ভয় কিছুটা ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু আল আমিন আবার আক্রমণে ফিরে ৫৫ রানের এই জুটি ভেঙ্গেছেন। জংবি ৩৪ রান করে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
এরপর জুটি বেধেছেন ওয়ালার ও মাদজিভা। বল হাতে দুই উইকেট নেয়া মাদজিভার ওপর ভরসা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু শেষে তিনিই কি না কি করলেন! ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার অবস্থায় ছিলেন। নো বলের কারণে বেঁচেছেন। আর তার বাঁচার মধ্যে বাংলাদেশের ম্যাচ হারা লুকিয়ে ছিল কে জানতো!
এর আগে জিম্বাবুয়ে দল বেশ গুছিয়ে বোলিং করলো। ফিল্ডিংয়েও চমৎকার নৈপুণ্য দেখালো তারা। আর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দেখা গেলো ছন্নছাড়া চিত্র। টি-টোয়েন্টি ঘনঘন চিত্র বদলের খেলা। বাংলাদেশের ইনিংসেও সেই চিত্র পাল্টেছে। কখনো বাংলাদেশ চাপ সামলে নিয়েছে। কিন্তু এটা সত্য, জিম্বাবুয়ের বোলারদের চাপে ফেলতে পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। মনে হলো, টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সাথে আসলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেভাবে পরিচিতই না!
এনামুল হক বল বেশি খেলেন। কিন্তু তিনি উইকেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেই দুটি জুটি হলো। তাতে দুবার চাপ সামলেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের সাথে তার তৃতীয় উইকেটে ২৪ রানের জুটি হয়েছে। এরপর চতুর্থ উইকেটে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৯ রানের জুটি হয়েছে সাব্বির রহমানের সাথে। কিন্তু এরপর এনামুল রইলেন। তার সঙ্গীরা এলেন আর গেলেন। সেই আসা যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশের সংগ্রহটাও বলার মতো হলো না। নির্ধারিত ২০ ওভারে রান উঠলো ৯ উইকেটে ১৩৫। শেষ ওভারে আউট হয়েছেন এনামুল। ৫১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেছেন ৪৭ রান।
অথচ টস জিতে যখন ব্যাট করতে নামেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস তখন ভিন্ন কথা মনে হয়েছিল। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে উইকেটে গেছেন তামিম। দ্রুত দুটি ছক্কাও মেরে দিয়েছেন। চতুর্থ ওভারের মধ্যেই এই জুটি তুলে নিলো ৩৪ রান। কিন্তু মাদজিভাকে তুলে মারতে গিয়ে শেষ হলো তামিমের ১৫ বলের ২১ রানের ইনিংস। পরের ওভারে ফিরে এলেন ইমরুলও (১০)। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাননি। এই ম্যাচে খেলেও তেমন কিছু করা হলো না ইমরুলের।
মুশফিকুর রহিম চার নম্বরে এলেন। সম্ভাবনা জাগালেন। তারপর জিম্বাবুয়ের ডেঞ্জারম্যান লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমার দুই দফা আঘাত হানলেন, একটু আগে ও পরে। প্রথমে ৯ রানে ফেরালেন মুশফিককে। তারপর সাব্বিরকে আউট করলেন ১৭ রানে। সাব্বিরের আউটের পর বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। একের পর উইকেট হারাতে থাকে। ৯ রানের মধ্যে ফিরে আসেন নাসির হোসেন (৩), মাহমুদ উল্লা (৮) ও মাশরাফি বিন মুর্তজা (০)। পানিয়াঙ্গারা এক ওভারে নিয়েছেন দুই উইকেট। ইনিংসে তিন উইকেট তার। দুটি করে উইকেট ক্রেমার ও মাদজিভার। এই স্রোতের প্রতিকূলে নিজেকে ধরে রেখেছিলেন এনামুল। অন্যদের সাথে তার পার্থক্য পরিশ্রম করে হলেও রান করেছেন।
পাঠকের মতামত