
অনলাইন ডেস্ক।
১২ বছর বয়স থেকে শুরু। প্রতিদিন তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। চলেছে টানা চার বছর। এই চার বছর তার কেটেছে ঘোর অন্ধকারে। ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে তার জীবন। প্রতিদিন ৩০ বার করে গুণে গুণে তিনি ৪৩ হাজার ২০০ বার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
মেক্মিকোর ২৩ বছর বয়সি এক নারী এভাবেই বর্ণনা করেছেন তার জীবনের বিভৎস দিনগুলোর কথা।
তার নাম কারলা জাসিন্তো। কারলা জানান, মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়েন।
তিনি ছিলেন মফস্বলের মেয়ে। তার ছোটবেলার জীবন ছিল খুব কষ্টের। অভাবের কারণে পরিবারে সবসময় কলহ লেগে থাকতো। তার নিজের মা পর্যন্ত তাকে দেখতে পারতেন না। বাড়ির লোকজনও তার প্রতি উদাসীন ছিলেন।
পাচারকারীর খপ্পরে পড়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে কারলা জানান, মেক্সিকো সিটির একটি পাতাল রেলস্টেশনের কাছে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন কারলা ওই যুবককে ভদ্রলোক ভেবেছিলেন। এ যুবকটি যে একজন মানব পাচারকারী তা বুঝতেই পারেননি কারলা। ওই যুবক কারলার মন ভুলানোর ফন্দি আটলো। এর মাঝেই তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
একদিন কারলাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যান ওই যুবক।
এখান থেকেই যে তার অন্ধকার জীবনের শুরু তখনো তা বুঝতে পারেননি কারলা।
মেক্সিকোর মানবপাচারকারী চক্রের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাক্সকালা অঙ্গরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয় কারলাকে।
সেখানে তারা একসঙ্গে তিন মাস কাটান। ওই তিন মাস কারলা ভালোই ছিলেন বলে জানান।
কিন্তু এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় শহর গুয়াদালাহারাতে। এখানে কারলা জাসিন্তোর পতিতাবৃত্তির জীবন শুরু হয়।
সেই দুর্বিসহ জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন ‘আমি সকাল ১০টায় শুরু করতাম, শেষ করতাম মধ্যরাতে। প্রতিদিন ৩০ বার চলত যৌন নির্যাতন। এই অত্যাচারের একপর্যায়ে আমি কাঁদতে শুরু করতাম। এটা দেখে খদ্দেররা খুব মজা পেত, আর হাসতো। শেষ দিকে আমার কোনো অনুভূতি থাকত না। এইভাবে চলত দিনের পর দিন।’
কারলা আরো জানান, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি ১৫ বছর বয়সে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান কাছে থাকলে ব্যবসা ভালো চলবে না এই অজুহাতে সন্তানটিকেও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। পুরো এক বছর তিনি সন্তানের মুখ দেখতে পাননি।
২০০৬ সালে তার অন্ধকার জীবনের অবসান ঘটে। মেক্সিকোতে এক পাচারকারী বিরোধী অভিযানে মুক্তি পান এই নারী। বর্তমানে কারলা মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।
পাঠকের মতামত