
মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে..
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের পুরাতন কামরা বলে একটা জায়গা আছে। অনেকের কাছে বটতলী স্টেশন বলেই পরিচিত। দেবশ্রী রায়ের যখন শুটিং চলছিলো তখন স্টেশনে আসা উৎসুক লোকজন ভেবেছিলেন কোন বিজ্ঞাপনের শুটিং হচ্ছে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটলো ঘটনাটা। সবাই যখন জানতে পারলেন এতক্ষণ যে নারী সংলাপ বলে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছিলেন তিনি আসলে অন্য কেউ নন। কলকাতা তথা দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। তাকে চিনতে অনেকখানি সময় লেগে গেছে শুটিং দেখতে থাকা লোকজনের। ততক্ষণে ভিড় লেগে গেছে পুরো স্টেশন চত্বরে। খবর ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেটগামী যাত্রীদের মাঝেও। সবাই আসছিলেন তখন দলে দলে। শেষমেশ পরিস্থিতি এমন হলো ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত লোকজন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা অবলম্বনে যৌথ প্রযোজনার একটি ছবি করতে দেবশ্রী এখন চট্টগ্রামে। দৃশ্যের প্রয়োজনে তাই তাকে ৮ই নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে হবে স্টেশনের কামরায়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শুটিংয়ের এক ফাঁকে তার সঙ্গে কথা হলো মানবজমিনের। তিনি বললেন, আমার হোটেলে চলে আসলে ভালো হতো। সেখানে ডিরেক্টরও থাকবেন। তখন অনেক কথা বলা যাবে। এ কথা বলার একটু পরই আবার বললেন না ঠিক আছে। সময়টা বের করা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের হাতে ২০ মিনিট সময় আছে। আপনি শুরু করুন। বাংলাদেশে তো বহুবার এসেছেন। এখানে আপনার প্রিয় কোন বন্ধু আছে।-প্রশ্ন করতেই হাসলেন দেবশ্রী। বললেন, সবাই আগে জানতে চায় সিনেমার কথা। আর আপনি জানতে চাচ্ছেন ব্যক্তিগত জীবন। এদেশের আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। তিনি বন্ধুদের তালিকায় শীর্ষে। ‘মায়ের আশীর্বাদ’ সিনেমার পর থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। সিনেমা নিয়ে অনেক সময় পার করে দিলেন। সেরা কাজ কোনটি জানতে চাইলে কি বলবেন?-এই প্রশ্নের উত্তর তো দেয়া একটু জটিল। কারণ আমি ৩০০ ছবিতে অভিনয় করেছি। সব ছবির নামও বলতে পারবো না। তবে আগের ছবির সঙ্গে এখনকার ছবির কিছুটা ব্যবধান আছে। সেটি কি রকম?-এই যেমন গল্পের কাহিনী বাছাইয়ে। আগের সিনেমায় সামাজিক প্রেক্ষাপটে সিনেমা তৈরি হতো। এখন রবীন্দ্রনাথ কিংবা অন্য কারো কোন গল্প বাছাই করে সিনেমা হচ্ছে। দর্শকও খাচ্ছে। সময়ের কারণে এমন চাহিদা তৈরি হচ্ছে। তার মানে বলতে চাচ্ছেন এই ধরনের ছবির প্রতি আপনার বেশি আগ্রহ রয়েছে?- না, না তা কেন। বহু আগে ১৯৯৭ সালে ‘উনিশে এপ্রিল’ ছবির জন্য পেয়েছিলাম পুরস্কার। এরপর আর সেই ধরনের ছবির মতো কাজ করা হয়নি। কলকাতায় এখন দেব, শুভশ্রী, সোহম, কোয়েলরা অভিনয় করছে। এদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে বেশি মেধাবী মনে হয়।- সত্যি বলতে কী ওদের বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। কারণ ওদের ছবি আসলে খুব একটা দেখা হয়নি। তাছাড়া, নিজে কলকাতার সিনেমা কবে দেখেছি তা ভুলে গেছি। আপনিতো একজন রাজনীতিবিদ। সিনেমাও করছেন। শিল্পী হিসেবে দেবশ্রীর দায়বদ্ধতা কি?-খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন। দেখুন আমি মনে করি একজন শিল্পী শুধু শিল্পী নন। তিনিও একজন মানুষ। তার অবস্থান থেকে কিছু করার আছে। আমার একটি এনজিও আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে লোকজন আমার বাড়িতে আসে তাদের নানা সমস্যা নিয়ে। রাজনীতি পেশায় জড়িত হয়ে আমি তাদের সমস্যা কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করি। কলকাতার সিনেমার বাজার কেমন?- খুব ভালো। বাংলাদেশের রিসেন্ট অবস্থা জানি না। তবে আমাদের ওখানে প্রচুর সিনেমাপাগল লোক আছে। হলে ছবি এলে দলবেঁধে দেখতে যাওয়ার কালচার আছে। বলিউডের আরেক অভিনেত্রী রানী মুখার্জি তো আপনার নিকট আত্মীয়। তার অভিনয় নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?-সে তো ভালোই করছে। আরও ভালো করবে। আলাদা
করে কিছু বলার এখনও সময় আসেনি। তবে হ্যাঁ, তাকে আরও অভিনয় করতে হবে।
পাঠকের মতামত