
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিন্ডিকেটের দখলে
আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী:
কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক জনসংখ্যার একমাত্র চিকিৎসা সেবার স্থান মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফের সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। ডাক্তার,নার্স থেকে শুরু করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কতর্মচারীরাও ওই সিন্ডিকেটর হাতে জীম্মি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি,রেফার,ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহসহ সবকিছুই ওই সিন্ডিকট নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত ভর্তি রোগীরা সরকারী ভাবে বরাদ্ধকৃত খাবার পুরোপুরি পাচ্ছে না বলে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, সরকারীভাবে প্রতি রোগীর জন্য দৈনিক ৭৫ টাকা বরাদ্ধ করে সকালে একশত গ্রাম পাউরুটি(৩ পিচ),একটি সিদ্ধ ডিম ও ২ টি বাংলা কলা,দুপুরের খাবার চাউল ১৫০ গ্রাম,মাছ ৭৫ গ্রাম,সিদ্ধ ডিম ১ টি ও ডাল ৫০ গ্রাম রাত্রের খাবার চাউল ১৫০ গ্রাম,মাংস ৫৪ গ্রাম ও ডাল ৫০ গ্রাম। সপ্তাহে তিন দিন মাছ,তিন দিন মাংস ও ১ দিন সবজি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার তা পুকুরচুরির মাধ্যমে তা না দিয়ে হাসপাতালের কতিপয় ৪/৫ জন কর্মচারীর যোগসাজশে সকালে ১০০ গ্রাম(৩ পিচ) পাউরুটির স্থলে ৫০ গ্রাম(২ পিচ)ও ২ টি কলার স্থলে ১ টি বাংলা কলা,দুপুরের মাছ ৭৫ গ্রামের স্থলে ৫০ গ্রাম,ও ডাল ৫০ গ্রামের স্থলে ৪০ গ্রাম এবং রাত্রে ৫৪ গ্রাম মাংসের স্থলে ৫০ গ্রাম করে দিচ্ছে। ফলে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের বরাদ্ধকৃত খাবার ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রায় সময় খেয়ে ফেলে ফলে ভর্তি রোগীরা তাদের হাসপাতালের বরাদ্ধকৃত খাবার পাচ্ছে না। জরুরী বিভাগে কোন মারামারি,নির্যাতন ও ধর্ষনের রোগী আসলে ওই সিন্ডিকেটটি ওই রোগীর আতœীয়স্বজনদের পিছনে ছায়ার মত লেগে থাকে কক্সবাজার রেফার করা ও সার্টিফিকেট নিয়ে দেওয়ার জন্য। আর ওই নন গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেটর মূল্য নেওয়া হয় ৬ হতে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে না আসলে ডাক্তরী সার্টিফিকেট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে ফলে গরীব ও অসহায় রোগীদের বাধ্য হয়ে তাদের মাধ্যমে সার্টিফিকেট নিতে হয় বলে ভুক্তভোগী রোগীরা জানান। সে সিন্ডিকেটট একটির এর একটি দূর্নীতি করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তারা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেটটি স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কেহ যদি তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে তাহলে তাদের বাহিনী দিয়ে তাকে শায়েস্তা করে দেয়। ফলে মান সম্মানের ভয়ে হাসপাতালের কেউ তাকে কিছু বলেনা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী অন্যত্র চলে গেছে। তারা হাসপাতালে বছরের পর বছর চাকুরী করে হাসপাতালকে তাদের বাসা বাড়ীতে পরিনত করেছে। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের সুইপার থেকে শুরু করে হাসপালের এমনটি টি এইচ পর্যন্ত ওই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মী। তারা হাসপাতালের রুগি ভর্তি,ষ্টোর রুম থেকে খোলা বাজারে ঔষধ বিক্রি,হাসপাতালের গাছ কাটা,রুগিদের পথ্য সরবরাহসহ সবকিছুই তারা অঘোষিতভাবে নিয়ন্ত্রন করে করছে বলে একাধিক সুত্রে প্রকাশ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরিব অসহায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচেছন ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে উপজেলায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্টা করা হয়। পরে গত ২০০৭ সালে ৩১ শয্যা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা উন্নত করা হয়। প্রতিষ্টা পর থেকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ গাইনি বিশেষজ্ঞ ও শৈল্য চিকিৎসকের পদ থাকলেও এই পদে কোন গাইনি বিশেষজ্ঞ ও শৈল্য চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে এই দ্বীপ এলাকার প্রসূতি সেবা পাচ্ছে না নারীরা। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। এছাড়া এই দ্বীপে বেসরকারি ভাবে প্রসূতি সেবা দেওয়ার জন্য কোন ক্লিনিক গড়ে উঠেনি। ফলে উপজেলার একটি পৌরসভার ও ৮টি ইউনিয়নের লোকজন প্রসূতি সেবা থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। নামে মাত্র ৫০ শয্যা হাসপাতাল থাকলেও কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যা হাসপাতালে। ফলে লোকবলের অভাবে হাসপাতাল চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ২৮টি পদের মধ্যে আছে ৬ জন চিকিৎসক। ১৪ জন সেবিকার মধ্যে ২ জন সেবিকা রয়েছে। ফলে গাইনী চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটের কারণে গর্ভবতী মহিলারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে জরুরি প্রসূতি সেবা পাচ্ছে না । মাসে ১০ থেকে ১৫ জন জরুরি প্রসূতি রোগি হাসপাতালে সেবার জন্য এলে তাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর সাধারণ প্রসূতি রোগি এলে তাদেরকে সেবিকার মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করা হয়। মহেশখালী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্টার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ গাইনী বিশেষজ্ঞ ও শৈল্য চিকিৎসকের পদটি শুন্য থাকায় এলাকার জরুরি প্রসূতি রোগি সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, গত ৩২ বছরের মধ্যে চারজন গাইনি চিকিৎসক এই হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা আবার এক মাস যেতে না যেতেই তদবির করে অন্যত্র বদলী হয়ে যায়। এ কারণে প্রসূতি রোগিদের পাশাপাশি বড় ধরনের অপরেশন করার মতো রোগী আসলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করতে হয়। তিনি বলেন, গাইনী বিশেষজ্ঞ ও শৈল্য চিকিৎসক সহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপরে অনেক লেখালেখি করেও কোন কাজ হচ্ছে না। ফলে লোকবল সংকটের কারণে ৫০ শয্যা হাসপাতালটি চার বছর ধরে চালু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, পানির সমস্যাটা এতই প্রখট যে তা দেখে মনে হয় দেখার জন্য যেন কোন কর্তৃপক্ষ নেই। ৪ লক্ষ মানুষের জন্য ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা সদরে অবস্থিত হাসপাতালটি চিকিৎসার একমাত্র সহায় সম্বল। এ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখার কেউ নেই বললেই চলে।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বা¯হ্যকমপেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে বিগত জোট সরকারের আমলে উক্ত ভবন উদ্বোধন করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল আসবাবপত্র,বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও অবকাটামোগত সমস্যার কারনে এখনও পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি।এই স্বা¯হ্য কমপ্লেক্সের শুন্য পদগুলি হল,স্বা¯হ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা-১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট(সার্জরী),জুনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু)১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট(এনেস)১জন,জুনিয়র কনসালটেন্ট(মেডিসিন)১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট(গাইনি)১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট(শিশু)১জন,জুনিয়র কনসালটেন্ট(অর্থো:)১জন,জুনিয়র কনসালটেন্ট(কার্ডিওগ্রাফি)১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট(ইএনটি)১জন,ডেন্টাল সার্জন ১ জন,মেডিকেল অফিসার ৪জন,সহকারী সার্জন(আইএমও) সহকারী সার্জন(প্যাথলজিষ্ট)১জন, সহকারী সার্জন(এনেসথেসিয়া) সহকারী সার্জন(রেডিওগ্রাফি),হিসাব রক্ষক,পরিসংখ্যান,এক্স-রে ম্যান,এম্বুলেন্স ড্রাইভার,নার্স সুপারভাইজারসহ ২৩জন,২য় শ্রেণী(নার্স সুপার) ১ জন,২য় শ্রেণী(নার্স)১০ জন,ওয়ার্ড বয়,সুইপারসহ ৩য় শ্রেনী ৩৩জন,৪র্থ শ্রেনী ২৪ প্রতিটি পদসহ সর্বমোট ৭০ টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শুন্য রয়েছে যার ফলে উপজেলার প্রায় চার লক্ষ জনসাধারনকে চিকিৎসা সেবা নিতে বিভিন্ন সমস্যা ও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচেছ।এই হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন ও এম্বুলেন্স থাকলে ও সেগুলো রোগীদের কোন কাজে আসছে না টেকনেশিয়ান/ড্রাইভার না থাকার কারনে।
অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর সাথে একাধিক এটেনডেন্ট থাকে। রোগীর এটেনডেন্ট ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভদের চলাফেরা ও কথোপকথন হাসপাতালে বাজারের অবস্থা সৃষ্টি হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিকাংশ ডাক্তার অনুপস্থিত থাকেন কর্মস্থলে। অনেকে মাসের শেষ কার্য দিবসে এসে পুরো মাসের উপস্থিতির রুটিন খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে তুলে নিচ্ছে বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা। ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ উপজেলার চার লক্ষ জনসাধারনের একমাত্র চিকিৎসা সেবার স্থান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো থাকলেও নেই পর্যাপ্ত পরিমান ডাক্তার,নার্স, ঔষধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। এই অবস্থায় সরকার ঘোষিত সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা সরকারের দেয়া অঙ্গীকার ব্যর্থ হতে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্লেখিত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
মহেশখালীর প্রায় চার লক্ষ জনসাধারন উক্ত সিন্ডিকেট চক্রটির হাত থেকে এই হাসপাতালটি রক্ষার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সম্প্রতি হাসপাতালের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও চরম সেচ্ছ্বাচারিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট এলাকার এমপি মহেশখালী হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে নানা দুর্নীতির সাক্ষাত প্রমাণ পান। এমপির এমন পরিদর্শনের খবর পেয়ে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভ প্রর্দশন করেন। হাসপাতালে এহেন লাগাতার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত দুর্নীতি বন্ধের নির্দেশ দেন এলাকার সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উলাহ রফিক। এলাকার চিকিৎসা বঞ্চিত জনতার স্বার্থকে উপেক্ষা করে নজিরবিহীন এই দুর্নীতির সাক্ষাত প্রমাণ পেয়ে তিনি অনেকটা মারমুখি হয়ে যান।
সূত্র জানায়,দীর্ঘ সময় ধরে মহেশখালী হাসপাতালের ডাক্তার-কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের যথাযত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রহ্য করে প্রকাশ্যে চিকিৎসা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। মহেশখালীর সন্তান হয়েও কতিপয় ডাক্তার এলাকার প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালটিকে নিজেদের দুর্নীতির কব্জায় নিয়ে এসে নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার সাংসদ বেশ কয়েকদিন ধরে নিজস্ব গেয়েন্দা সূত্রে খবর নিয়ে গতকাল অত্যান্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। বিধিমতে তিনি হাসপাতালটির সভাপতি। বেলা ৩টার কিছু সময় আগে তিনি হাসপাতালে ঢুকে প্রায় ১ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকতেই রোগীদের ভীড় থাকলেও দায়িত্বরত ডাক্তারকে কর্তব্যস্থলে দেখা যায় নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এলাকার সন্তান হওয়ায় তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ সময় সাংসদ হাসপাতলের বিভিন্ন রেজিষ্টারে বড় ধরণের অসঙ্গতি দেখে বিষ্মিত হয়ে যান। দীর্ঘসময় পরে ঈড়ী’নধীবৎ ২হাসপাতালের ডিউটি অফিসার এলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ডিএইচও উপস্থিত হন। এ সময় ডাক্তাদের ইন-আউট রেজিষ্টার, ডিউটি রেজিষ্টার ও কর্মকর্তা কর্মচারিদের রেজিষ্টারে বড় ধরনের গড়মিল দেখতে পান তিনি। অনেক অনুপস্থিত ডাক্তার-কর্মচারীকে উপস্থিত দেখিয়ে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। একইভাবে হাসপাতালের কতিপয় ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপস্থিতির স্বাক্ষরের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। এসময় এলাকার শত শত চিকিৎসাবঞ্চিত জনতা হাসপালে উপস্থিত হয়ে ডাক্তার-কর্মচারীদের নানা দুর্নীতির কথা এমপির কাছে তুলে ধরেন। হাসপাতাল সংশিষ্টদের এহেন জঘন্য আচরণের প্রমাণ পেয়ে তিনি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এদিকে পরির্দশনকালে এমপির তরফ থেকে বিভিন্ন রেজিষ্টার ফাইল চাওয়া হলে অনেক ফাইল দেখাতে পারে নি।
অপরদিকে প্রধান অফিস সহকারী আব্দুল মান্নান খাতায় বিভিন্ন জনের নামে ভূয়া স্বাক্ষরসহ তড়িঘড়ি করে খাতায় লেখালেখির সময় স্থানীয়দের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এ সময় উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের বাইরে দুর্নীতিবাজ অপর এক স্বাস্থ্যসহকারীকে উত্তম-মাধ্যম দেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক অনিয়ম, গুরুত্ব সহকারে রোগিদের সেবা না দেওয়া, জরুরি বিভাগে নামে-বেনামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কারণে অকারণে রোগীদেরকে জেলা হাসপাতালে প্রেরণ, রোগীদের সাথে দুর্বব্যহার, নার্স রুমে ভর্তি রোগিদের কাছ থেকে নিবন্ধন ফিসের নামে টাকা আদায়, হাসপতাল কম্পাউন্ডে গড়ে ওঠা ডাক্তারদের চেম্বারে রোগী দেখার ক্ষেত্রে গলাকাটা পদ্ধতিতে ভিজিট আদায়, হাসপাতালের লোকজনের আস্কারায় পার্শ্ববর্তী ফার্মেসীগুলোর কর্মচারী কতৃক ঔষধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টনাটানি ঈড়ী’নধীবৎ ১ও রোগির টাকা হাতিয়ে নেয়া, রাতে হাসপাতাল সড়কের ফার্মেসীতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ঔষধের মূল্য বাড়ানো, অফিস সহকারী আব্দুল মন্নান কর্মচারীদের বেতন বিলসহ বিভিন্ন ট্রেনিং ভাতায় উৎকোচ আদায়, ট্রেনিং উপকরণ ক্রয়ে ভূঁয়া বিল-ভাউচার তৈরি, নিয়মিত মাসিক সভা না করা, আউটডোরে সময় মত রোগী না দেখে টিফিন বিরতির নামে ভিজিটে রোগী দেখা, রোগীদের খাবারে অনিয়ম, পথ্য সরবরাহে টাকা আদায়সহ একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন। পরিদর্শনকালে সাংসদ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পরে নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন হাসপাতালেও নজিরবিহীন অনিয়ম হচ্ছে। হাসপাতাল কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটই তা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে সূত্রের অভিযোগ। পরে হাসপাতাল প্রধান ডা. সুচিন্ত চৌধূরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার উপস্থিত হলে অতিসত্তর নানা অব্যবস্থাপনা নিরসনে উদ্যাগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ডা. সুচিন্ত চৌধুরী হাসপাতালের নানা সংকটের কথা এমপির নিকট তুলে ধরেন। নার্সসহ হাসপাতালের জনবল, বিদ্যুৎ, প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জাম সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্তেও রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান।
পরে এমপি আশেক হাসপাতালের পুরুষ ও নারী রুগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করে চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার সাথে ছিলেন। হাসপাতালের সামনের সড়ক লোকে লোকরণ্য হয়ে যায়। জানতে চাইলে এমপি আশেক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য অনেক বির্সজন দিচ্ছেন, সেখানে সুবিধাবাদী কারো দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। তিনি আগামীতে মহেশখালী হাসপাতাল সংশিষ্টরা আরো সাধারণের স্বাস্থ্য সেবায় আরো বেশি আন্তরিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পাঠকের মতামত