
অনলাইন ডেস্ক
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছে। এসবে কোনো ফল হবে না। এরশাদ-ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনরাও কম করেননি, কিন্তু লাভ হয়নি। বিএনপি কেউ ভাঙতে পারেনি। শেখ হাসিনাও পারবে না।
সেন্ট্রাল লন্ডনের রিভারব্যাংক পার্ক হোটেল প্লাজায় স্থানীয় সময় রবিবার (১ নভেম্বর) রাতে আয়োজিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ প্রবাসীদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করে যুক্তরাজ্য বিএনপি।
এদিকে রাজধানীতে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সারাদেশে যে আন্দোলন হয়েছে, সেভাবে ঢাকায় গড়ে তোলা যায়নি। তবে সারাদেশে যে আন্দোলন হয়েছে, তা স্বাধীনতার সময়ও হয়নি।
ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার জন্য তিনি সরকারের ‘নির্যাতনকে’ দায়ী করেন। এ সময় তিনি বর্তমান সরকারকে হটাতে সব দল-মতের মানুষকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘লেডি হিটলার’ মন্তব্য করে বিএনপি প্রধান বলেন, দেশে রাজতন্ত্র কায়েম করছেন তিনি। তিনি যখনই যা হুকুম করছেন পুলিশ, র্যাবসহ অন্য বাহিনী তখনই তা করছে। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর শেখ হাসিনা নির্যাতন চালাচ্ছেন।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় অভিযোগ করে খালেদা জিয়া ‘দেশ বাঁচাতে জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ মোটেও ভালো নেই। অত্যাচার-জুলুমের সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা দেশে গিয়েছিলেন রাজনীতির জন্য নয়, তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে’- এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে দেওয়া শেখ হাসিনার তখনকার একটি সাক্ষাৎকারের উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, হাসিনা তখন দেশ গড়তে যাননি, ধ্বংস করার সংকল্প নিয়ে দেশে গিয়েছিলেন।
দেশে একের পর এক ঘটনা ঘটছে, আর এসবের জন্যে দায়ী করা হচ্ছে বিএনপিকে- এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণেই দেশের আজ এ অবস্থা।
এ সময় জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্যে আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, জঙ্গি-জঙ্গি চিৎকার করে বিদেশিদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে আওয়ামী লীগ ছাড়া জঙ্গি মোকাবেলা সম্ভব নয়, বিএনপি এলে জঙ্গি উত্থান হবে। আওয়ামী লীগের সময়ই জঙ্গি উত্থান হচ্ছে, বিএনপি’র সময় এ জঙ্গিদের ধরা হয়েছিল।
দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে চাইছে- এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের আগের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেটি প্রমাণ হয়েছে।
সাত বছরে বিএনপির তিন হাজার নেতাকর্মী খুন, এক হাজার দু’শ নেতাকর্মী গুম ও এক হাজার ১২ জনকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে শিগগিরই দেশে ফিরবেন জানালেও তারিখের বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করেননি খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, আমার যাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। দেশে গিয়ে আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে হবে। স্থায়ী কমিটির নেতাদের অনেক কিছু নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি ছাড়া ওনারা (স্থায়ী কমিটি) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এরা (পরিবার) আমাকে যেতে দিতে চায় না। কিন্তু আমাকে যেতে হবে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। সভায় আরো বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. কেএমএ মালিক, প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, কাউন্সিলর অলিউর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আখতার হোসাইন, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মামুন, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, যুবদলের আহ্বায়ক দেওয়ান মোকাদ্দিম চৌধুরী নিয়াজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন ও জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ,ন,ম এহছানুল হক মিলন, মাহিদুর রহমান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম, হুমায়ুন কবির, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, সাংবাদিক সালেহ শিবলি, মুশফিকুল ফজল আনসারী, সাবেক ছাত্রনেতা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, পারভেজ মল্লিক, নাজমুল হাসান জাহিদ প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার এই সভা চলাকালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করেন।
পাঠকের মতামত