প্রকাশিত: ২৬/১০/২০১৫ ৫:০৬ অপরাহ্ণ
“প্রবারণা প্রেক্ষাপট ও জাহাজ ভাসা উৎসব”

jahaz vasa jpg-132
প্রজ্ঞাবোধি থের::
মহান প্রবারণায় রামুতে ঐতিহাসিক “জাহাজ ভাসা উৎসব” উদ্যাপিত হয়ে থাকে। জাহাজ ভাসা উৎসব নিয়ে মানুষের কৌতহলের সীমা নেই। কেননা অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে জাহাজ ভাসা উৎসব বুদ্ধের ধর্মের অর্ন্তগত কিনা ? এই জাহাজ ভাসা উৎসব নিয়ে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন মতামত পোষন করে থাকেন। কেউ কেউ বলেন জাহাজ ভাসা বুদ্ধের ধর্মের অর্ন্তগত নয়। কিন্তু সকলের জানা থাকা প্রয়োজন যে, পৃথিবীতে যাহা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তাহা বিনা কারনে বা অহেতুক ভাবে হয়নি। তেমনি ভাবে এই জাহাজ ভাসা উৎসবও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা মহামানব গৌতম বুদ্ধের এক বিরল ইতিহাসকে কেন্দ্র করে উদ্যাপন করে থাকেন।

জাহাজ ভাসা উৎসবের ইতিহাস সংক্ষিপ্তরূপ-
মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবর্দশায় বৈশালীতে ক্ষত্রিয় বংশের সাতহাজার সাতশত সাতজন রাজা পালাক্রমে রাজত্ব করে আসছিলেন। ধন-ধান্য পরিপূর্ণ জনসমাকির্ণ সেই পুণ্যময় বৈশালী। পরস্পর হিংসা ভেদ বাদ-বিসংবাদ বলতে কিছুই ছিল না সেই রাজ্যে। রাজা-প্রজা সকলেই মহাসূখে দিন কাটাতেন। এক সময়ে হঠাৎ করে সেই বৈশালীতে দূর্ভিক্ষ, মহামারি ও অমনুষ্যের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিল। এই ত্রি-বিধ উপদ্রবে রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিল। তাতে প্রজারা বিষম ভাবে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন এবং রাজার কাছে সেই বার্তা পৌঁছালেন। রাজাও প্রজাদের এমনবিদ অবস্থা দেখে বিষম চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সহসায় এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রান লাভের জন্য রাজ্যের রাজা প্রমূখ অমাত্যের উপদেশে বুদ্ধের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। বুদ্ধ তখন রাজগৃহে বিম্বিসার রাজার দানকৃত পূর্বারাম বিহারে অবস্থান করছিলেন। বৈশালীবাসীগণ মহালি লিচ্ছবি ও রাজা পুরোহিত পুত্রকে রাজা বিম্বিসারের কাছে পাঠালেন এবং বিনীত ভাবে এই বিষয় অবগত করলেন। বিম্বিসার রাজা এবং মহালি লিচ্ছবি সকলেই বুদ্ধকে ফাং করলেন বৈলাশীতে গমন করার জন্য। বুদ্ধ সেই ফাং গ্রহন করে বিম্বিসার রাজার সাথে বৈশালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। বিম্বিসার রাজা বুদ্ধের গমনা গমনের সকল রাস্তা উপকৌঠন দিয়ে সজ্জিত করে দিলেন। পথের মধ্যে বিশ্রামাগার, পুস্কুরণী, বিহার নির্মাণ করেছিলেন। বুদ্ধের সাথে আরো পাঁচশত ষড়াবিজ্ঞ অরর্হৎ শিষ্য বৈশালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন। বৈশালীর আগে গঙ্গা নদী। সেই গঙ্গা নদীতে রাজা বিম্বিসার ২টি নৌকা সজ্জিত করে বুদ্ধের জন্য সুব্যবস্থা করেদিলেন। যাতে বুদ্ধ তার পাঁচশত শিষ্য নিয়ে সুন্দর ভাবে বৈশালী পৌঁছতে পারেন। রাজা বিম্বিসার বুদ্ধকে বন্দনা করে বললেন, প্রভু বৈশালী থেকে অতিশয় রাজগৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিবেন। আমি আপনার অপেক্ষায় থাকব। বুদ্ধ প্রমুখ পাঁচশত শিষ্য বৈশালীতে উপস্থিত হলে রাজা প্রজাগণ বুদ্ধকে সকলেই বিপুল সমারোহে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেখানেই আনন্দ স্থবিরকে বলেছিলেন, আনন্দ রতন সূত্র পাঠ করে সমস্ত বৈশালী রাজ্যে মঙ্গলাজল সিঞ্চন কর! যাতে করে রাজ্যের সমস্ত উপদ্রব দুরীভুত হয়। আনন্দও বুদ্ধের উপদেশে তা প্রতিপালন করলেন। জল সিঞ্চনের সাথে সাথে সারা বৈশালী থেকে সমস্ত মহামারি দুরীভুত হয়ে গিয়েছিল। বৈশালী আবার সেই পুরনো পরিবেশকে ফিরে পেয়েছিল। বৈশালী রাজারা বুদ্ধকে আবারও যথাযোগ্য পূজা দিয়ে রাজগৃহের পথে যাত্রা করলেন।

এদিকে, নাগলোকের মহাঋদ্ধিমান নাগেরা চিন্তা করলেন মনুষ্য পুত্ররা বুদ্ধকে কতই পূজা করছে। আমরাও এই সুযোগে বুদ্ধকে স্বশরীরে পূজা করতে যাব। সাথে সাথে তারাও নাগলোক থেকে পাঁচশত নাগরাজ বিমাণের (জাহাজের) মত ঋদ্ধিময় ফণা বিস্তার করে বুদ্ধ প্রমূখ পাঁচশত শিষ্যের মাথার উপরে স্থাপিত করলেন। এই ভাবে নাগরাজের এই ঋদ্ধিময় বিমাণের (জাহাজের) রূপ ধারণের মাধ্যমে পূজা দর্শন করে স্বর্গের দেবতা সহ ব্রহ্মালোকের ব্রহ্মারাও তা অবলোকন করে বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছেন। সেই দিবসটি ছিল বর্ষাবাসের সমাপ্তি দিবস “প্রবারণা”। সেই দিবসে বুদ্ধ প্রমুখ পাঁচশত শিষ্যকে মনুষ্যগণ, নাগগণ, দেবগণ, ব্রহ্মাগণ শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় পতাকা উন্ডীয়ন করে ঋদ্ধিময় পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা লাভ করে রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এই মহান চিরসত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা প্রতিবছর জাতী ধর্ম, বর্ণ নির্বেশেষে সকলেই “জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন করে থাকি।

কাহীনি সংগ্রহ- ধম্মপদট্ঠ কথা অষ্টমখন্ড
পকিন্নকবগ্গো গৌতম বুদ্ধের স্বকীয় পূর্বকর্মের উপখ্যান অবলম্বনে।

লেখক :
অধ্যক্ষ, বোধিরতœ বুদ্ধ বিহার ও
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, সত্যপ্রিয় বিদর্শন সাধনা কেন্দ্র,
হাজারীকুল, রামু।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় শিক্ষক রিমনের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড়, অপরাধীকে দ্রুত শাস্তির দাবি

উখিয়ায় শিক্ষক রিমনের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড়, অপরাধীকে দ্রুত শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় একজন স্কুল শিক্ষক দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ...