
নজরুল ইসলাম লাভলু, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) থেকে ফিরে..
পার্বত্যাঞ্চলের সোনাখ্যাত সেগুন গাছ কেটে রেশম চাষের লক্ষে তুত গাছ রোপণ করে নজির সৃষ্টি করেছে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন শিব মন্দির এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ চাকমা। প্রায় দু’বছর আগে ভারতের রেশম চাষীদের সাফল্য দেখে এসে গোবিন্দ চাকমা নিজস্ব প্রায় দু’একর জমির সেগুন গাছ কেটে সেখানে তুত গাছের বাগান সৃজন পূর্বক রেশম চাষ শুরু করেছেন। এ কাজে তিনি যথেষ্ট সাফলতা পেয়েছেন। তার সফলতার খবর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জেলার অনেকেই এখন রেশম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। ইতিমধ্যে একই উপজেলার কালিফ চন্দ্র চাকমা, ঝন্টু চাকমা, সূবর্ণা চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার নাগরী চাকমা, শান্তি চাকমা রেশম চাষ করে সফল চাষী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বছরের নির্দিষ্ট মাত্র ৬০দিনে চার দফায় প্রতিজন চাষী রেশম উৎপাদন করে ৬০ হাজার টাকা করে আয় করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে রেশম চাষ এখন পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক প্রসারতা লাভ করেছে।
গত ১৬ অক্টেবর এ প্রতিবেদক সরেজমিন খাগড়াছড়ি জেলাধীন গোলাবাড়ী, কমলছড়ি, দেওয়ানপাড়া, কংছাইরী পাড়া, বেলতলী, খামারপাড়া এলাকা পরিদর্শনকালে পার্বত্য এলাকায় রেশম শিল্পের এগিয়ে যাওয়ার এ চিত্র চোখে পড়ে। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, পার্বত্যঞ্চলের রেশম চাষ ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিণ্ট মন্ত্রনালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় জেলা সম্প্রসারণ কার্যালয়ের অধীন চলতি অর্থ বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ১৯ হাজার তুত চারা রোপণ করা হয়েছে। এর আগে একই বছর চাষীদের মাধ্যমে আরো ৩৩ হাজার তুত চারা রোপণ করা হয়েছিল। পূর্ব পরকিল্পনা অনুযায়ী ১টি আইডিয়াল রেশম পল্লী, ১ টি আশ্রায়ন রেশম পল্লী এবং ৯টি ব্লক পদ্ধতিতে এ রেশম চাষ করা হয়েছে। মোট ১২০ জন চাষী রেশম চাষের আওতায় সুবিধা পাবে। চলতি বছর জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের অধীন মোট তুত চাষীর সংখ্যা ১২শ ৪২জন। গুটি উৎপাদনকারী বশনির সংখ্যা ৬০জন।
এদিকে, চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামনাশীষ দাশ জানান, পার্বত্যাঞ্চলের রেশম চাষ সম্প্রসারণের অধীন চলতি বছর বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলাধীন সিনারী বাজার এলাকায় ১ হাজার, লামা উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় ১ হাজার ৯০০, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলায় ২ হাজার ৫০০, একই উপজেলার ঘাগড়ায় ৮শ নতুন তুত চারা বিতরণ করা হয় চাষীদের মাঝে। একইভাবে কাপ্তাই উপজেলায় চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫০০টি তুত চারা রোপণ করা হয়। আবার চাষীদের মাধ্যমে আরো ১ হাজার ৫০০টি চারা রোপণ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে তুত চারা রোপণ, উত্তোলন ও পরিচর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষনের উদ্ভোধন
কাপ্তাই প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরেঃ
গত ১৬ অক্টোবর জেলার রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ে ০৪ দিন ব্যাপি তুত চারা রোপণ, উত্তোলন ও পরিচর্চা বিষয়ে চাষী প্রশিক্ষণ ২০১৫ এর উদ্ভোধন করেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান রনিক চাকমা, চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাশ, জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমান। সিনিয়র লাইব্রেরীয়ান মোঃ কামরুল ইসলাম, সুপারভাইজার রঞ্জিত চাকমা, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম লাভলু প্রমুখ।
পাঠকের মতামত