প্রকাশিত: ১৭/১০/২০১৫ ৫:০৯ অপরাহ্ণ
উখিয়ায় মাদকের নীল ছোবলে যুব সমাজ

madok1
আবদুর রহিম সেলিম, উখিয়া ॥
কক্সবাজারের উখিয়া দেশি-বিদেশি হরেক ব্র্যান্ডের তরল ও শুকনো মাদক, হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট, মানব পাচার, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পদচারণা ও অবৈধ অস্ত্রের সহজ লভ্যতা, কী নেই এখানে! কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত জনপদ উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দারা এতগুলোর ভয়াবহতার মাঝে দেশের প্রচলিত আইন মেনে এখন বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এতদাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ, যুবক-কিশোর হাত বাড়ালেই অতি সহজে পাচ্ছে ঐসব মাদক, আয় করছে কালো টাকা। অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের সন্তান ও আগামীর সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রতিদিন গণমাধ্যম ও স্থানীয় ভাবে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের কোন না কোন স্থানে উদ্ধার হচ্ছে নেশা জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেটসহ হরেক রকমের মাদক দ্রব্য। প্রতিবেশী মিয়ানমারই অধিকাংশ মাদক সরবরাহের উৎস। চলতি বছরের এ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী উদ্ধার করেছে অন্ততঃ অর্ধ কোটি পিস ইয়াবা, হাজার হাজার বোতল তরল জাতীয় মাদক, হেরোইন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের মাদক দ্রব্য। বিশেষ করে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার এমন কোন পাড়া, মহল্লা, গ্রাম বা জনপথ বাকি নেই যেখানে ইয়াবার বিতৃতি ঘটেনি। সম্প্রতি মাদক দিবসে এ তিন উপজেলার অন্ততঃ ৪২টি পয়েন্ট বা ঘাট দিয়ে এসব মাদক দ্রব্য মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসার তথ্য প্রকাশ করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

সংঘবদ্ধ মাদক পাচারকারীরা আগে তাদের ভাড়াটে লোক দিয়ে মাদক পাচার ও বাজার জাত করে থাকলেও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে তারা এসব মাদক পাচার ও বাজারজাতে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের অবলম্বন হিসেবে মহিলা, স্কুল, মাদ্‌রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এগোচ্ছে। এতে একদিকে মাদক পাচার ও বাজারজাত করা যেমন সহজ ও নিরাপদ, অন্যদিকে নগদ কালো টাকার লোভে পড়ে সাধারণ স্বপ্নে বিভোর শিক্ষার্থী, নিম্ম, মধ্য ও উচ্চ বিত্ত পরিবারের লোকজন, বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি, বেসরকারি, এনজিও কর্মী, চাকরিজীবী, বেকার কিশোর-যুবকরা পাচারে জড়িত হয়ে পড়ছে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকলাঙ্গ ও অন্ধকারাচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রতি বছর মাদকের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে দেশের জন্য সরকারের দেওয়া ভুর্তকি মূল্যের সার, ডিজেল, কেরোসিন, ভোজ্যতেল, জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ, নানা ভোগ্যপণ্য চোরাইপথে মিয়ানমার পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের ভূমিকা ও তৎপরতা কিছুটা প্রশংসনীয় ও উল্লেখ যোগ্য হলেও এসব এলাকায় সরকারের নিয়োজিত অন্যান্য বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজনের তৎপরতা ও ভূমিকা তেমন আশানুরূপ নয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এতে মাদক প্রতিরোধের স্থলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার এক শ্রেণির লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাচারকারীদের সহযোগিতা দিয়ে বা নিজেরা জড়িয়ে পড়ে লাভবান হচ্ছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, হালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, নাইটংপাড়া, লেদা, হ্নীলা পুরাতনবাজার, মৌলভীবাজার, হারাংখালী, উনছিপ্রাং, হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া, রহমতেরবিল, ধামনখালী, বালুখালী কাটা পাহাড়, হাতি মুড়া, ডেইলপাড়া, পূর্ব ডিগলিয়া, কড়ইবনিয়া, চাকবৈঠা, নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুনধুম, জলপাইতলি, তুমব্রু কোনাপাড়া, মগপাড়া, রেজু, আমতলী, ওয়ালিদং ও আচারতলীসহ ৪২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক দ্রব্য পাচার হয়ে এদেশে আসছে। সীমান্তের এসব পয়েন্টের ওপাড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় ৩৭টির মত ইয়াবা তৈরির ছোট বড় কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাদক পাচারকারী ও চোরাকারবারীরা যৌথ সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য পাচার করে যাচ্ছে।

সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) পক্ষ থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী (বিজিপি) সদস্যদের নিকট বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সভায় সীমান্তের মাদক পাচার ও মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে স্থাপিত ৩৭টি ইয়াবা তৈরির কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রতিটি সভায় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে মাদক পাচার প্রতিরোধে ও ইয়াবা তৈরির কারখানা বন্ধের ব্যাপারে বিজিবিকে আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত এ ব্যাপারে মিয়ানমার তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে টেকনাফ ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন। গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতৃক সারাদেশে ৭৬৮ জন ইয়াবা পাচারকারীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে তালিকাভুক্ত উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের অধিকাংশ পাচারকারীর নাম রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে প্রতিটি থানা ও বিজিবিসহ বিভিন্ন সরকারীর সংস্থার নিকট আলাদা তালিকা রয়েছে।

উখিয়া থানার ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমান জানান, উখিয়া সর্বত্র প্রায় আড়াইশ জনের মত ইয়াবা পাচারকারী ও সেবনকারী রয়েছে। ফলে উখিয়ার সর্বত্র ইয়াবা পাচার, ব্যবসা ও সেবন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

নিহতের জিহ্বা কেটে পালিয়েছে সহযোগীরাউখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

  পলাশ বড়ুয়া:: কক্সবাজারের উখিয়ায় ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু ...