ইলা মুৎসুদ্দীঃ এ বছর ২৭ অক্টোবর আরো একবার আমরা বৌদ্ধরা আমাদের অন্যতম প্রধান ও পবিত্র ধর্মীয় উৎসব পবিত্র প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করতে চলছি সরকারী ছুটি থেকে বঞ্চিত হয়ে। আমরা বাংলাদেশের নাগরীক। আমাদের প্রধান মন্ত্রীর সম্প্রীতির শ্লোগান “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে আমরা বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রীষ্টান, মুসলিম একত্রে বাস করি। আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। মুসলিমদের ঈদ যেমন একমাস রোজার পরে অতীব আনন্দঘন দিন হয়ে আসে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আসে শারদীয় দুর্গোৎসব।
তাঁদের এই দুইটি উৎসব মহাসাড়ম্বরে পালনের জন্য রয়েছে সরকারী ছুটি। তেমনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। যেটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় মহাসমারোহে আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করে থাকে। ঈদ আসবে আসবে এই ভাবনায় মুসলিম ভাই-বোনেরা যেভাবে খুশীতে বিভোর হয়ে থাকে, পূজো আসবে বলে যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায় অপেক্ষা করে অধীর আগ্রহে, অনুরূপ বৌদ্ধ জাতি ও তিনমাস উপোসথশীল পালন, বিভিন্ন দানময়, শীলময়, ভাবনাময় কর্ম সম্পাদন করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে প্রবারণা পূর্ণিমার জন্য। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গত কয়েক বছর যাবত প্রবারণা পূর্ণিমায় ছুটি ঘোষণার জন্য বৌদ্ধরা দাবী করে আসলেও এখনো সরকারীভাবে তা কার্যকর করার কোন উদ্যোগ গৃহীত হয়নি।
উল্লেখ্য সরকারী ছুটি না থাকায় দূর-দূরান্তে কর্মরত যারা আছেন তারা পরিবারের সাথে মিলিত হয়ে একত্রে এই উৎসবটি উদযাপন করতে পারেন না। প্রবারণা পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যার সময় সকলে অপেক্ষা করে থাকে ফানুষ উড়ানোর জন্য। এ যেন এক মিলনমেলা। বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রীষ্টান, মুসলিম এর একতার আনন্দের মেলা। এজন্য আমি সরকারী দপ্তরে এবং সংসদে যে সকল বৌদ্ধ নেতারা কথা বলার জন্য রয়েছেন তাদের অনুরোধ করব আপনারা প্রবারণা পূর্ণিমার গুরুত্ব সরকারের নিকট যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করুন। তাহলে কার্যকর হতে বেশী সময় লাগবে না। কারণ আমরা জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল ধর্মকে সমানভাবে মর্যাদা দেন। মর্যাদা দেন বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সদিচ্ছার কারণেই আমরা দুর্বৃত্তদের হামলায় রামুর ধ্বংসীভূত বিহারগুলো-কে নবরূপে নান্দনিক বিহার রূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিস্থাপিত দেখছি। সংসদে রয়েছেন আমাদের বৌদ্ধ সমাজের আলোকিত ব্যক্তিত্ব মাননীয় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ কুমার বড়ুয়া, চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীয় রায় সহ রয়েছেন আরো কয়েকজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদার মানসিকতায় বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ছুটি ঘোষণা করা হোক এটা বৌদ্ধদের প্রাণের দাবী। আমাদের এই দাবী দ্রুত কার্যকরের জন্য সরকারীভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত হোক এই আশা ব্যক্ত করছি।
পাঠকের মতামত