
মাহমুদ আজহার:
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। কারাবন্দী রিজভী এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে কাতরাচ্ছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পেটে গুলি খাওয়া রিজভীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হলেও তাকে রাখা হয়েছে সাধারণ ওয়ার্ডে, যেখানে সাধারণত দাগি আসামিদের রাখা হয়। তার স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম আইভী গত মঙ্গলবার এসব তথ্য দিয়ে বলেন, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড, হাত ও পায়ে অপারেশন জরুরি হলেও তা করা হচ্ছে না।
বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান। কারাবন্দী হয়ে অন্তত ১৫টি রোগে আক্রান্ত আমান এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত তিনি। আমানের স্ত্রী সাবেরা আমান বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে তার স্বামীকে মুক্তি দেওয়া উচিত। এই দুই নেতার মতো বিএনপির অন্তত পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে। ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। কারাগারে থাকা নেতাদের কেউ কেউ প্রিজন সেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের এবার কোরবানির ঈদ কাটবে কারাগারে।
জানা যায়, বিগত আন্দোলনে রাজনৈতিক মামলার পাশাপাশি দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাও রয়েছে কারও কারও বিরুদ্ধে। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য ঈদের আগেই নেতাদের কারামুক্তি চান। কিন্তু আইনানুগভাবে প্রায় সব নেতা-কর্মীকেই ঈদ কাটাতে হবে জেলে।
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে জেলে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর তালিকা তাদের হাতে রয়েছে। অবশ্য মাঝে-মধ্যে কেউ কেউ জেল থেকে বেরোচ্ছেন। আবার নতুন করে কেউ কেউ কারাগারেও যাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক, দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জি কে গউছ, সাবেক এমপি আশিফা আশরাফি পাপিয়া, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী প্রমুখ। এ ছাড়াও জেলা পর্যায়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। এর মধ্যে অনেকেরই জামিন আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ঈদের আগে তাদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারাগারে থাকা বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা। ন্যায়বিচার পেলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের কারামুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা আশা করছি, কোরবানির ঈদে সম্ভব না হলেও ঈদের পরপরই সব রাজবন্দীর মুক্তি মিলবে। এরপর দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দুর্নীতির মামলায় কাশিমপুর কারাগার-১ এ বন্দী। গত শনিবার বাবাকে দেখে আসেন ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন। তিনি জানান, বাবাকে ছাড়া আমাদের নিরানন্দ ঈদ কাটবে এবার। পরিবারের সবারই মন খারাপ। বাবার জন্য জামিন চাইলেও তা স্থগিত হয়ে যায় বলে জানান তিনি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের পরদিন বাবার সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সীতাকুণ্ডে হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তারও শারীরিক অবস্থা ভালো নেই বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এর মধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বাবরকে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা-মামলায় কারাগারে অন্তরীণ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে পারিবারিকভাবে জানা গেছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তারেক রহমানের বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, করফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ন্যায়বিচার হলে কোনো মামলারই ভিত্তি থাকবে না।’
পাঠকের মতামত