
বরগুন প্রতিনিধি :
যে স্কুলে ছাত্রী ১০, শিক্ষক–কর্মচারী ১১ জন ! বরগুনার আমতলী উপজেলার কালীবাড়ি নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাত্র ১০ জন। কিন্তু সেখানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১১ জন। তাঁরা ১৯৮৫ সাল থেকে সরকারি বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে এলে তাঁরা পাশের বিদ্যালয় থেকে এনে শিক্ষার্থী বেশি দেখান। এভাবেই ৩০ বছর ধরে বিদ্যালয়টি চলছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাগজে-কলমে বিদ্যালয়টিতে ১৩৪ জন ছাত্রী দেখানো হলেও বাস্তবে রয়েছে ১০ থেকে ১২ জন। কিন্তু এখানে আটজন শিক্ষক, একজন করণিক ও দুজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি বেতনভুক্তই ১০ জন। একজন শিক্ষক সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন।
গত শনিবার বিদ্যালয়ের খাতাপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, কাগজে-কলমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্রীসংখ্যা ৪২, সপ্তম শ্রেণিতে ৪৫ ও অষ্টম শ্রেণিতে ৪৭। ষষ্ঠ শ্রেণির হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ২৪ জন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে ছিল সাতজন। সপ্তম শ্রেণিতে দুজন ছাত্রী উপস্থিত হলেও খাতায় কোনো উপস্থিতি নেই। অষ্টম শ্রেণিতে একজন উপস্থিত, কিন্তু খাতায় উপস্থিতি নেই। এরপরও এ বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয় বলে জানান শিক্ষকেরা। বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী বলে, প্রতিদিন বিদ্যালয়ে সাত-আটজনের বেশি ছাত্রী উপস্থিত হয় না।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিদ্যালয়টি এভাবে চলছে। যখন কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন, তখন পাশের বিদ্যালয় থেকে ছাত্রী ধার করে উপস্থিতি দেখানো হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসংখ্যা ১০ জন।
প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, শনিবার স্থানীয় হাটের দিন থাকায় ৩০ জন ছাত্রী উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে তো মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী আছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা শনিবার বলেন, এ উপজেলার কালীবাড়ি নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ছাড়াও হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়, এ কে ইউনুছ আলী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কে এস এইচ জনতা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। এদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধির জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত এ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুকুমার চন্দ্র হালদার বলেন, ‘এই বিদ্যালয় সম্পর্কে আমি অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। :দৈনিক শিক্ষা
পাঠকের মতামত