
csb24.com:
দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং দেশের যেসব উপজেলায় সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ নেই সেখানে একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের সকল উইং (অনুবিভাগ) ও দফতর প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে সচিবালয়ে আজ সকাল ১০টায় বিশেষ সভা আহ্বান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা দেন যেসব উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই সেসব উপজেলায় একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজকে জাতীয়করণ করা হবে। এর আগে ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেশের সকল কলেজকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও এলাকায় অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তিকরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভাও করেছিলেন। এতে সকল উপাচার্যই নিজেদের অধীনে সকল সরকারি-বেসরকারি কলেজকে নেয়ার পক্ষে ছিলেন। বেসরকারি কলেজের উদ্যোক্তা ও অধ্যক্ষরা এই উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিরোধিতার কারণে ওই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট আবারও সকল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে নড়েচড়ে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।জাতীয়করণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই বাণিজ্যশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যেই জাতীয়করণ হতে পারে এমন কলেজের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।তিন ডজন কলেজের তথ্য সংগ্রহ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, কলেজের নানা সমস্যা, সীমাবদ্ধতা ও জটিলতা দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর চাকরি জাতীয়করণ হচ্ছে_ এমন খবরে চাহিদা অনুযায়ী টাকাও দিচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণের বাইরে রাখার সুপারিশ করারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী অভিযোগ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এসএম বশীর উল্লাহ বলেন, ‘আমাকে কলেজ পরিদর্শন কমিটিতে কো-অপ্ট সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। আমি কলেজ পরিদর্শনে যাই না।’ ইতোমধ্যে কয়টি কলেজ পরিদর্শন করা হয়েছে সে সম্পর্কে তার কাছে কোন তথ্য নেই বলেও জানান উপ-পরিচালক। গতকাল নাগাদ প্রায় ৫০টি কলেজের পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।উপজেলা সদরে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) কেএম রফিকুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে দেশের ৩১৫টি উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই।’
আর দেশের ৩২৫টি উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই বলে জানান মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০০ সরকারি কলেজ রয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, যেসব উপজেলায় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, বা বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে সেগুলোকে জাতীয়করণ করলে সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হবে। কারণ মডেল বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে আইসিটি ল্যাব, গ্রন্থাগার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। এছাড়া মডেল বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।আজকের সভার অন্যান্য আলোচ্যসূচির মধ্যে কলেজ জাতীয়করণের জন্য এক মাসের মধ্যে কলেজের তালিকা, বিধিমালা ও ব্যয়ের পরিমাণ স্থির করা। এছাড়াও নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্ত, উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণ, ইউজিসি আইন (সংশোধন) চূড়ান্তকরণ, এক্রিডিটেশন আইন চূড়ান্তকরণ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট ধার্য নিয়ে আলোচনা, আগামী জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেন কোনক্রমেই ফাঁস না হয় সে সম্পর্কে আলোচনা, বেতন/মর্যাদা ইস্যুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন অন্যতম।
পাঠকের মতামত