
স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নাধীন বারঘোনা সিনেমা হল এলাকায় বসবাসরত শেখ মো: জাকির হোসেন প্রকাশ জাকির জমদার। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মৃত জাকির হোসেনের অসহায় পরিবারটি দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। বর্তমানে অসহায় পরিবারটি অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
সম্প্রতি, মুক্তিযোদ্ধা শেখ জাকির হোসেনের বিধবা মেয়ে শাহিদা আক্তার সাজেদা সাজু বর্তমান সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে তার পিতার মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু তার পিতা যে, একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ২৬ জানুয়ারী ১৯৭২ইং সনে ইন্ডিয়ান লেঃ কঃ এসবি থাপা কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি সনদ ব্যতিত আর কিছুই তাদের হাতে নেই। তবে জাকির জমাদার যে, একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা কেপিএম ও কেআরসি প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডার কবির আহমদ, কাপ্তাই উপজেলা কমান্ডের সহকমান্ডার, তথ্য ও প্রচার মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ এনড্র এন বাড়ৈ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম মল্লিক ও রাঙ্গামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু কর্তৃক পৃথক পৃৃথকভাবে সনদ প্রদানের সুপারিশ করেছেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় অথবা মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডে যোগাযোগ করাও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
মুক্তিযোদ্ধা জাকির জমাদারের স্ত্রী তাহেরা বেগম সবুরা (৬০) কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, তার স্বামী জাকির জমাদার কর্ণফুলী পেপার মিলের নিরাপত্তা শাখায় নিরাপত্তা পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে তার মৃত্যু হয়। চাকরীর কিছু জমানো অর্থ দিয়ে দুটি উপযুক্ত মেয়েকে বিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় হয়ে যায়। বর্তমানে ২ মেয়ের স্বামী মৃত্যু বরণ করেন। একমাত্র বেকার ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ মোট ১১ জনের পরিবার নিয়ে কোন মতে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের। মুক্তিযোদ্ধার সনদটি পেলে সরকারি কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যেতো। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছেনা। মৃত্যুর পূর্বে যদি তার স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের সনদটি দেখে যেতে পারলে মরেও তিনি শান্তি পেতেন। বর্তমানে এই বিশাল পরিবারের মাথাগুজার কোন ঠাই নেয়। ২০০৮ সালে তৎকালীন কাপ্তাই উপজেলা ইউএনও ও ওসির সহযোগিতায় বারঘোনা সিনেমা হল এলাকায় অস্থায়ী ভাবে মাথা গুজার একটি ঠাই করে দিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে ভাঙ্গা ঘরে দিন কাটছে এই অসহায় পরিবারটির।
পাঠকের মতামত