প্রকাশিত: ০৫/০৩/২০১৫ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

মহিউদ্দিন মাহী, কক্সবাজার:
জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আর অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন মিলে লুটপাটে করে চলছে কক্সবাজার আইন কলেজ। কলেজে ভর্তি বাবদ কর্তৃপক্ষ সরকারি কোন ধরণের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে প্রায় তিনগুন টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এ কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় ঝরে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
১ম বর্ষে ফরম পূরণের জন্য ২হাজার ৯০০টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার ১০০টাকা। এমনকি কলেজের ভর্তি ও ফরম পূরণের তথ্য সম্পর্কিত কোন নোটিশও টাঙ্গানো হয়নি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রকৃত তথ্য গোপন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফরম পূরণ ফি: কমানোর দাবী জানিয়ে একটি আবেদন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গেলে আবেদন পত্রটি রিসিভ করেননি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বাহার উদ্দিন। শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়, ‘যতো টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দিয়ে ফরম পূরণ করতে পারলে করো, না হয় চলে যাও। আর এই দরখাস্তও আমি নিতে পারবো না।’ পরে হতাশ হয়ে ক্ষোভ নিয়ে ফিরে আসেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি বাবদ ফরম ’ফি’সহ সরকারিভাবে ১ হাজার ৫৩৫ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকা।
উপরোক্ত বিষয়ে ৪ মার্চ কক্সবাজার আইন কলেজে অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রী হাজির হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, ভর্তি ফরম, ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফরম পূরণসহ বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা আদায় করলেও এসব টাকার কোন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র বা রশিদ দেয়া হয় নি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা কোন খাতে কি পরিমাণ টাকা নেয়া হয়েছে বা টাকা বুঝে পেয়েছে এমন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দাবী করলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন অফিস সহকারি নুরুল হুদা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ বাহার উদ্দিন। এমনকি এসব টাকা দিতে না পারলে অন্য কোন কলেজে গিয়ে ভর্তি হতে বলেন তারা।
এভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় ভর্তি হতে পরেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডভোকেট মোঃ বাহার উদ্দিন যোগদানের পর থেকেই গত ৭ বছরে অনিয়ম- দূনীর্তি মধ্যে চলছে কক্সবাজার আইন কলেজ। কিন্তু এসব অনিয়ম-দূর্নীতি রোধে কোন ভূমিকা নেই সংশ্লিষ্টদের। যেখানে আইনের পড়াশুনা খোদ সেখানেই এমন অনিয়ম-দূর্নীতি ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। তবে অনিয়ম-দূর্নীতির ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছে আইন কলেজের গভর্ণিং বডি’র সভাপতি।

কলেজটি’র একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে অধ্যক্ষ স,আ, ম সামশুল হুদা চৌধুরী দক্ষিণ চট্রগ্রামের মধ্যে কক্সবাজারে একমাত্র আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে কলেজের অফিস সহকারি নুরুল হুদাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে বলে জানা যায়।
এদিকে ২০১২-২০১৩ ইং সনের নিরক্ষন প্রতিবেদনে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাহার উদ্দিন নিজেকে অধ্যক্ষ দাবী করলেও প্রকৃত তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলে সূত্র জানায়। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আজম বেগ আইন কলেজ পরিদর্শনে আসলে তার কাছে এটি ধরা পড়ে। এসময় কলেজের সকল শিক্ষকের সামনেই তাৎক্ষনিক মোঃ বাহার উদ্দিন এর নেমপ্লেটটি নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ বাহার উদ্দিন।

সূত্র আরো জানায়, গেল বছর কলেজের নামে বরাদ্দ হওয়া ২০শতক জমি’র রাজস্ব বাবদ ১৮লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে এ খাতে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি ভাউচার তৈরী করার পর তা ধরা পড়ে গভর্ণিং বডির সভাপতি ও সদ্য বিদায়ি জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন এর হাতে। এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ও গভর্ণিং বডি’র অন্যান্য সদস্যরা ওই ভাউচারে স্বাক্ষর করেন নি। এভাবে গভর্নিং বডি’র সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইতিপূর্বে অতিরিক্ত বিল-ভাউচার বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
পুরো বছর জুড়ে একটি চা না খেয়েও বছর শেষে প্রায় লাখ টাকা আপ্যায়ন বিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

কলেজ ভবন নির্মাণের নকশা তৈরি খচর বাবদ দেখানো হয়েছে ৭০ হাজার টাকা, মেরামত ও মজুরি খরচ বাবদ দেখানো হয়েছে ১৯ হাজার ২শ ৯০ টাকা, যাতায়াত খরচ বাবদ ৩১ হাজার ৫ টাকা।
এছাড়া গেল বছর কলেজ তহবিলের টাকা ব্যয়ে কলেজের প্রবেশদ্বারে দুটি দোকান নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দোকান দু’টি কোন সেলামি ছাড়াই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডভোকেট মোঃ বাহার উদ্দিন এবং অফিস সহকারি নুরুল হুদা। সেখানে একটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজস্ব চেম্বার খুলে বসেছেন, অন্যটিতে অফিস সহকারি খুলে বসেছেন ষ্টেশনারি সামগ্রীর দোকান। তারা আজ পর্যন্ত কোন ভাড়াও জমা করেননি কলেজ তহবিলে। অথচ আদালত পাড়ায় ১০ লাখ টাকার নিচে কোন দোকানের সেলামি নেই জানা যায়।

এছাড়া, জেলা আইনজিবী সমিতির শ্রীমতি কুসুম বালা নামে এক সুইপারের নাম দিয়ে গত ৭ বছরে প্রতি মাসে ১২শ টাকা করে ১০ লক্ষ ৮শ টাকা উত্তোলন করেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারি নুরুল হুদা। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায় শ্রীমতি কুসুম বালা আইন কলেজের কোন কাজে নেই। আছে শুধু তার নাম।
আইন কলেজের অফিস সহকারি‘র কক্ষ দেখলে বুঝার অবকাশ নেই এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস। মনে হয় কক্ষটি মোটর সাইকেলের গ্যারেজ। সজেমিনে দেখা যায়, নুরুল হুদা আইন কলেজে প্রভাব কাটিয়ে অফিস কক্ষের ভিতরে মোটর সাইকেলের গ্যারেজ পরিনত করেছে। এই বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে গেলে তাদেরকে হুমকি ধমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে।
আইন কলেজ গভর্ণি বড়ি’র সদস্যকে প্রভাবিত করে নিজের ঠিকানা স্থায়ী করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এই নুরুল হুদা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ গভর্ণিং বডি’র এক সদস্য জানান, হিসাবে কিছু গরমিলের অভিযোগ আসার কারণে হিসাবটি গভর্ণিং বডি’র আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া দোকান নির্মাণ সহ অনেক কিছুই গভর্ণিং বডি’র বৈঠকে জানানো হয় না। যার কারণে অনেক কিছুই আমাদের অজানা।’ কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গভর্নিং বডি’র বৈঠকে এজেন্ডা উপস্থাপন না করার কারণে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।’

উপরোক্ত বিষয় নিয়ে কথা হলে কক্সবাজার আইন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডভোকেট মোঃ বাহার উদ্দিন জানান, কলেজে এই ধরণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে দাবী করেন তিনি। এছাড়া কলেজের জমি নিতে গিয়ে কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান। কলেজের দোকান ঘর রেজুলেশন করেই আমাদের গভর্ণিং বডি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পূর্ব মুহুর্তে কলেজের শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করে বলেন, শিঘ্রই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরে তিনি ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াশুনার খোজ খবর নেন এবং ভাল করে লেখাপড়া করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।

পাঠকের মতামত

  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত
  • হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক
  • বৌদ্ধ তারুণ্য সংগঠন- সম্যক এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
  • টেকনাফে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
  • কর্মক্ষেত্রে অনন্য কক্সবাজারের একমাত্র নারী ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন
  • টেকনাফে অর্ধডজন মামলার আসামি ডাকাত আবুল খায়েরসহ গ্রেপ্তার-২
  • ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারসহ ৫৬ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • চকরিয়ায় থানার সামনে সাংবাদিকের উপর হামলা
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

    সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

      আব্দুস সালাম, টেকনাফ:: সাগরপথে টেকনাফের বাহারছড়ায় মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গাকে ...