মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া ::
উখিয়া উপকূল দিয়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে স্কুল ছাত্ররাও। দালালরা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুল ছাত্রদের ধরে জোর পূর্বক সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিয়ে আটকে রেখে মোটা অংকের মুক্তিপন দাবী করছে। মানব পাচারকারীদের দালালদের এ ধরনের কর্মকান্ডে উপকূলীয় এলাকার লোকজনদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। গত ২ মাস পূর্বে দালালরা সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে জোর পূর্বক সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ায় পাচার করে সেখানে আটকে রেখে মুঠোফোনের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে। মুক্তিপনের টাকা না দেওয়ায় ২৭ জানুয়ারী দালালদের হামলায় মহিলা সহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে।
জানা যায়, উখিয়া উপজেলার উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়া গ্রামের মৃত হাছন আলীর ছেলে আলা উদ্দিন (৩৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে অজি উল্লাহ (২৫) ও উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে শাহ জাহান (২৭) দীর্ঘদিন ধরে সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করে আসছিল। দীর্ঘদিন মানব পাচারে জড়িত থাকায় তারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। উক্ত মানব পাচারকারীরা গত ২ মাস পুর্বে উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের লোকমান হাকিমের ছেলে সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র এনামুল হক (১৪) স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেয়। পাচার করার দেড় মাস পর মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুক্তি দাবী করে। এনামুল হকের বাবা লোকমান হাকিম অভিযোগ করে জানান, শাহ জাহানের নেতৃত্বে অপরাপর পাচারকারী তার ছেলেকে জোর পূর্বক মালয়েশিয়া পাচার করে দিয়েছে। বিগত ১০ দিন আগে মালয়েশিয়া থেকে তারা ফোন করে মুক্তিপন দাবী করে। আমি মুক্তিপন দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ২৭ জানুয়ারি মানব পাচারকারী শাহ জাহানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার বড় ছেলে ছকির আহমদকে হামলা করে। ছেলেকে মারধর করতে দেখে আমার স্ত্রী হাজেরা খাতুন এগিয়ে আসায় মানব পাচারকারী সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে আহতরা উখিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে আরও জানান, মানবপাচারকারী শাহ জাহান, অজি উল্লাহ ও আলা উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। থানায় মামলা করা এবং দালালদের চাহিদামত মুক্তিপন না দেওয়ায় মালয়েশিয়া আমার ছেলেকে খুন করা হবে এবং আমার পরিবারের লোকজনদের খুন করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে মানব পাচারকারী সন্ত্রাসীদের হুমকির মূখে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহ জাহান, আলা উদ্দিন ও অজি উল্লাহ এক সময়ের জেলে ছিল। তারা সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। সম্প্রতি ডিবি পুলিশের হাতে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারীর গডফাদার সোনার পাড়া গ্রামের মক্কীরানী নামে খ্যাতে রেবি আক্তার প্রকাশ রেবি ম্যাডাম ও মানবপাচারকারী পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার হাজী মোজাফ্ফর আহমদ ছেলে রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছুদিন মানবপাচারকারীরা আতœগোপনে থাকলেও শাহজাহানের নেতৃত্বে আরেকটি চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও সোনাইছড়ি গ্রামের রাসেলের বড় ভাই হোসেন আহমদ, কালা জমির, তার ছোট ভাই ফরিদুল আলম, নূরুল আমিন, মুজিবুল হক, রুস্তম আলী, আবুল কালাম, আলী আকবর, মুবিন নামের মানবপাচারকারীরা আতœগোপনে থেকে মানব পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সহজ সরল লোকজনদের মালয়েশিয়ায় গিয়ে সোনার হরিণ ধরার প্রলোবন দেখিয়ে সোনারপাড়া এলাকায় জড়ো রাতের আধাঁরে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে থাকে। আর এলাকার মধ্যে যারা অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদের জোর পূর্বক অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে ট্রলারে তুলে দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিয়ে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে।
পাঠকের মতামত