প্রকাশিত: ২০/১২/২০১৪ ৩:২৯ অপরাহ্ণ
খুটাখালী ফারজানা খুনের নেপথ্যে!

mrit.1
সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার:
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী কুতুবদিয়াপাড়ার ছৈয়দ নূর প্রকাশ ভুলুর কন্যা ফারজানা শারমিন উপজেলার ডুলাহাজারা রংমহল শ্বশুর বাড়িতে খুনের রহস্যের জট খুলছে। সম্প্রতি কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের তদন্তে ফারজানা খুনের ঘটনাটি নতুন করে মোড় নিয়েছে। ঘটনার প্রায় ৯০ দিন পর মামলার তদন্তের ভার সিআইডি পুলিশ দায়িত্ব নেওয়ায় খুনের সাথে জড়িতদের দৌড় ঝাপ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সিআইডির তদন্তে ঘটনার মূল হোতারা বেরিয়ে আসবে এমনতর ধারণা করছেন খুটাখালী ও ডুলাহাজারার লোকজন। অন্যদিকে ফেঁেস যাওয়ার আশঙ্কায় ফারজানার শ্বশুর বাড়ির লোকজন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তবে মামলায় প্রকৃত আসামি আটক না হয়ে থানা পুলিশের অভিযানে এলাকার অনেকে গ্রেফতার হলেও স্থানীয়দের মাঝে রহস্যের ধুম্রজাল সৃষ্ঠি হয়েছে। তার পরও খুনের মামলাটি তদন্তে গোয়েন্দা সংস্থার স্পেশাল টিম সিআইডি পুলিশ দায়িত্ব নেয়ায় জড়িতদের মুখোশ উম্মোচিত হবে এমনটাই ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন।

জানা গেছে, বিগত ২১ আগষ্ট রাতে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল গ্রামের ছৈয়দ আহমদের বাড়িতে ডাকাতি ও গুলিতে গৃহবধু ফারজানা শারমিনের খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে গৃহকর্তা ছৈয়দ আহমদ বাদি হয়ে গত ২২ আগষ্ট চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ২২-২৫জনকে আসামি করা হলেও পুলিশ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন। এদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়ার পর ফের একই আদালতে ওই জবানবন্দির বিপক্ষে নারাজি পিটিশন দাখিল করেছেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবি। আদালতে দাখিল করা নারাজি পিটিশনে গিয়াস উদ্দিন দাবি করেন, ঘটনার সাথে তার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিলনা। পুলিশী নির্যাতনের ভয়ে তিনি ঘটনায় নিজেকে জড়িত করে স্বীকারোক্তি দেন আদালতে। এ কারনে দেয়া জবানবন্দি তিনি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জানা গেছে, থানায় মামলাটি রুজু হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্বভার নেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র ধর। তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার মুহুর্তে প্রায় ৩ মাস পর স্পর্কাতর মামলা হিসেবে কক্সবাজার জেলা সিআইডি পুলিশ ক্ষমতাবলে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেন গত ২০ নভেম্বর। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি পুলিশ কক্সবাজারের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাংগীর আলম তদন্ত করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুলাহাজারার একাধিক লোকজন জানিয়েছেন, এ মামলায় পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নই। ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে ঘটনারদিন ভোরে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঘটনা দেখতে গ্রামের লোকজনের সাথে আয়াত উল্লাহ নামের আটক ব্যক্তি যেত কিনা তা যতেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পুলিশ এসময় আয়াত উল্লাহকে গ্রেফতার করে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে। তবে খুটাখালী থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই ভাবে মামলাটিতে গ্রেফতার হয়ে গিয়াস উদ্দিন, জাবেদ উদ্দিন ও অন্যান্যরা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তাদের পরিবারের লোকজন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ঘটনার পর বাদি মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে কারো নাম উল্লেখ করেনি। কিন্তু পুলিশী তদন্তে ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তবে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের মুর্হুতে কক্সবাজার সিআইডি পুলিশ মামলার তদন্তের দায়িত্বভার নিয়েছেন।
এক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে পারিবারিক বিরোধ বা কলহের জের ধরে ফারজানা শারমিনকে ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে খুন করা হয়েছে। যার বাস্তব প্রমান মিলে সদর দরজার প্রায় ১২-১৫ ফুট দুরত্বে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন শরমিনের পিত্রালয়ের লোকজন। তাদের ধারণা খুব কাছ থেকে অস্ত্র টেকিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যদি বাড়ি ডাকাতির ঘটনা ঘটত তাহলে বাড়ি থেকে মালামাল লুট হত। তাদের অভিযোগ বাস্তবতার সাথে ঘটনার অনেক ফারাক রয়েছে। অন্যদিকে নিহত ফারজানার স্বজনরা জানিয়েছেন, ঘটনার আগে গত রমজানের ঈদের দিন পারিবারিক কলহের জের ধরে ওই গৃহবধু গলায় ওড়না পেছিঁয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অথচ এ ঘটনার ১৫ দিন পর আত্মহত্যার জন্য ব্যবহৃত গিটু দিয়া গামছা তার স্বামী সিরাজ লোকজনকে দেখান। কিন্তু কেন বা কি কারণে ফারজানা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল তা রহস্যভুত। তাদের ধারণা সেই থেকে স্বামী ও শাশুড় বাড়ির লোকজনের সাথে তার মনোমানিল্য শুরু হয়। ঘটনার পেছনের ঘটনা সুচারুভাবে কক্সবাজার সিআইডি পুলিশকে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার পরিবারের লোকজন।

বর্তমান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের উপ-পরির্দশক (এসআই) জাহাংগীর আলম জানান চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মামলার তদন্ক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। থানা পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত, গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি বাদি ও নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েই প্রকৃত সত্য উৎঘাটনের চেষ্টা চলছে।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...