
আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী:
কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বিভিন্ন পাহাড়ে তৈরী হচ্ছে অবাধে দেশীয় অস্ত্র। কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব দেশীয় তৈরী অস্ত্র। সমাজের প্রভাবশালী কিছু মুখোশধারী জনপ্রনিধির ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরীর কারিগররা কারখানা করে সেখানে আনোয়াসে দেশীয় অস্ত্র তৈরী করছে। র্দীঘদিন ধরে মহেশখালীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর বড় ধরণের কোন অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় কারিগররা আরো বেপরোয়া হয়ে এসব অস্ত্র তৈরী করছে। সম্প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চট্রগ্রাম কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় চেকপোস্টে বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে দেশীয় তৈরি দুটি এলজিসহ গ্রেফতার হন মহেশখালীী উপজেলার বড় মহেশখালি পাহাড়তলী মাঝিরঘাট এলকার জালাল আহমদের পুত্র অস্ত্রকারিগর আজিজুল হক ও তার স্ত্রী সুমী আকতার। বড় মহেশখালী পাহাড়তলীর গহীণ পাহাড়ে তাদেরসহ ওই এলাকার আবদুল মাবুদ ও ইসহাকের পাঁচটি অস্ত্রে তৈরীর কারখানা রয়েছে বলে তারা চট্রগ্রাম বাকলিয়া থানা পিিলশের কাছে স্বীকার করেন। তারা সেখানে এসব অস্ত্র তৈরী করে কক্সবাজার জেলারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। এ পর্যন্ত তারা শতাধিক অস্ত্র চট্রগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করছেন। সিমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাকিঁ দিয়ে বিদেশী অস্ত্র সংগ্রহ করতে অনেক ঝুটঝামেলা ও ঝুকির্পূণ হওয়া তদপুরি দেশীয় তৈরী অস্ত্রের ছেয়ে বিদেশী অস্ত্রের মুল্য অনেক বেশী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পেশাদার ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর কাছে দেশীয় তৈরী অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কারিগররা কারখানাগুলিতে বিরতিহীণ ভাবে এসব দেশী ভস্ত্র তৈরী করছে।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলার একমাত্র ক্রাইমজোন ও সন্ত্রাসের জনপদ মহেশখালীর পাহাড়ে দেশীয় অস্ত্র তৈরী হচ্ছে বিগত ৩ দশক ধরে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন ও চারপাশে সাগরবেষ্টিত এই দ্বীপটি এক তৃর্তীয়াংশ পাহাড় সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে অস্ত্র তৈরীর কারিগররা এই দ্বীপের গহীণ পাহাড়ে অস্ত্র তৈরী করাকে বেশী নিরাপদ মনে করেন। উপজেলার বড় মহেশখালী,হোয়ানক,শাপলাপুর ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের এলাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্বীপের বির্স্তীণ পাহাড়ী এলাকার কড়ইবনিয়া, পুটির ঝিরি,সারসিয়া, গুলূরবর ঘোনা, কমলা ঘোনা, মরা ঝিরি, লোহার ছড়া,মুরিছড়ি, ধলঘাটার বেগুন বনিয়া,বড় মহেশখালীর বড় ডেইল শুগুরিয়া পাড়া পাহাড়ি এলাকা, কালারমারছড়ার ফকিরজুম পাড়া পাহাড়ি এলাকা ও শাপলাপুরের সোলতানÑকালাইয়া নামে খ্যাত পাহাড়ী জুম এলাকায় জঙ্গলবেষ্টিত গহীন পাহাড়ে খোদাই ও সুড়ঙ্গ করে দুই দিকে রাস্তা রেখে মনোরম পরিবেশে ওয়ার্কসপের মত করে অস্ত্র তৈরীর কারখানা বানিয়ে সেখানে আনোয়াশে দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরী করছে অর্ধশতাধিক অভিজ্ঞ কারিগররা। উক্ত কারখানাগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার লোহার পাট, স্টীলের নল, ড্রিল মেশিন, গ্যাসের চুলা, কয়লা, লেইদ মেশিনসহ বিভিন্ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরীর যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে কারিগররা সকাল থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে অস্ত্র তৈরীর কাজ করে থাকে। তারা দিনের বেলায় অস্ত্র তৈরী করাকে বেশী নিরাপদ মনে করে। কারণ এলাকার বিভিন্ন জায়গা ও বিভিন্ন স্থানে তাদের একাধিক সোর্স থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আসার আগাম সংবাদ তারা মোবাইলের মাধ্যমে সোর্সের কাছ থেকে পেয়ে সতর্ক অথবা পালিয়ে যায়। ফলে রাত্রে ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করে না। এখানে একটি অস্ত্র তৈরী করতে ১ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হলেও সেটি স্থানীয়ভাবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে তা ৭/৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর এসব কারখানাগুলোতে নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দাগী সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার ফেরারী আসামীদের। এলাকার দাগী, সন্ত্রাসী ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে এসব অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্ত্রের কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। দেশের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে এসব অস্ত্রের মুল্য বেশী পাওয়ায় এখানকার কারিগররা এই অস্ত্র তৈরী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তৈরী করা এসব অস্ত্র সরবরাহে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসিরাই এ অস্ত্রের কারখানা গুলো পরিচালনা করে। এলাকার কিছু মুখোশধারী জনপ্রতিনিধি মহল তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে এবং অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহেশখালীতে তৈরী করা দেশীয় অস্ত্র কক্সবাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। মহেশখালী দ্বীপের উত্তরপাশে বদরখালী ও কালারমারছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপিত হওয়ায় অস্ত্র পাচারকারীরা কক্সবাজার শহর হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র পাচারকে নিরাপদ মনে করছে। ফলে বিনা বাধায় আনোয়শে সন্ত্রাসিদের হাতে হাতে অস্ত্র হয়ে গেছে। সন্ত্রাসিরা যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করছে তার অধিকাংশই মহেশখালী থেকে আসা। বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশী অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিলো মহেশখালী থেকে। সে সময় এখান থেকে এম-১৬,একে-৪৭ ও রকেট লাঞ্চারের মত অত্যাধুনিক মারনাস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব, পুলিশ ও নৌবাহিনী।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করলেও দীর্ঘদিন থেকে মহেশখালীতে কোন বড় ধরণের উদ্ধার অভিযান না হওয়ায় সন্ত্রাসী এবং কারিগররা সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেপরোয়া হয়ে বেশী অস্ত্র তৈরী করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ওই নেটওয়ার্ক ফিশিং ট্রলার, লাকড়ী ভর্তি গাড়ি ও লবণ বোঝাই গাড়ীর মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র সরবরাহ ও বিক্রি করে। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে অস্ত্র কারবারিরা জেলা ও উপজেলার স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা সুন্দরী মহিলাদের দিয়ে তাদের শরীরের সাথে বেধে অথবা ভ্যানটি ভ্রাগে করে অভিনব কৌশল গ্রহণ করে এসব অস্ত্র জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছে। সম্প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চট্রগ্রাম কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় চেকপোস্টে বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে দেশীয় তৈরি দুটি এলজিসহ গ্রেফতার হন মহেশখালীী উপজেলার বড় মহেশখালি পাহাড়তলী মাঝিরঘাট এলকার জালাল আহমদের পুত্র অস্ত্রকারিগর আজিজুল হক ও তার স্ত্রী সুমী আকতার। বড় মহেশখালী পাহাড়তলীর গহীণ পাহাড়ে তাদেরসহ ওই এলাকার আবদুল মাবুদ ও ইসহাকের পাঁচটি অস্ত্রে তৈরীর কারখানা রয়েছে বলে তারা চট্রগ্রাম বাকলিয়া থানা পিিলশের কাছে স্বীকার করেন। বড়,মহেশখালী পাহাড়তলী এলাকার একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানা থেকে এসব অস্ত্র চট্রগ্রামের চকবাজারের ইয়াকুব ডাকাত দলের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য যাচ্ছিল। এর আগে তারা একাধিকবার অস্ত্র বহন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করেছিল।
এলাকাবাসী এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পূর্বক অস্ত্র কারখানাগুলোতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পাঠকের মতামত