
ঢাকা: জামিন প্রার্থনা না করায় সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালত।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান এ আদেশ দেন। তবে শুনানিতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। বাদী পক্ষে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এএনএম আবেদ রেজা নিজেই শুনানি করেন।
এএনএম আবেদ রেজা শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত লতিফ সিদ্দিকীকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। আদালতের এ আদেশে আমরা খুশী। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি।’ এ সময় লতিফ সিদ্দিকীকে তিনি দেশের কুলাঙ্গার বলেও মন্তব্য করেন।
এর আগে লতিফ সিদ্দিকী মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টায় ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাকে কালো গ্লাসের একটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে চারটিতেই গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়।
লতিফ সিদ্দিকীকে আদালত প্রাঙ্গণে আনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কয়েকশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার কাজে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল সোমবার আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করার জন্য তাগিদ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
সোমবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এএনএম আবেদ রেজার দায়ের করা মামলায় ওই তাগিদ দেন।
গত ১ অক্টোবর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এএনএম আবেদ রেজা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। ওইদিন বিচারক আসামিকে ২৮ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন দেন। তাকে না পেয়ে গত ১৬ অক্টোবর সচিবালয়ে লটকিয়ে সমন জারি করা হয়। এরপর গত ২৮ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
কিন্তু গ্রেপ্তার না করায় সোমবার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বাদী একটি আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট আদালতে। পরে বিচারক শুনানি শেষে কোনো সময়সীমা উল্লেখ না করে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের ওই আদেশ রমনা থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন লতিফ সিদ্দিকী।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করলো এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে? তারাতো ছিল ডাকাত। তখন সে একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী, জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী, তবে তার চেয়েও বেশি হজ ও তাবলীগ জামাতের।’
হজ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, ‘হজের জন্য ২০ লাখ লোক সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’
এ সময় তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘তাবলীগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদেরতো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’
ওই ঘটনার পরই দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন তিনি। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত