
বিশেষ প্রতিবেদক:
মামলার এজাহার, সাক্ষ্য এবং সুরতহাল রিপোর্টে আছে নিহত ব্যক্তির মাথা ও শরীরে ৪ টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। অথচ ডাক্তারি পরীক্ষায় বলা হয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুর কথা। সাত বছরের কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা হলেও ডাক্তারি পরীক্ষার কোন কাগজ নেই। একে একে তিন ভাই, পিতা-মাতা ও চাচা সহ পুরো পরিবারের সদস্যরা সবাই ধর্ষণ মামলার আসামী। টানা ২২ বছর ধরেই একটি হত্যা মামলা সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। বাংলাদেশী ধরেও চালান দেয়া হয় বৈদশিক আইনে। কক্সবাজারের আইন-আদালতের এসব অগণিত অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে আজ শনিবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অনুষ্টিত পুলিশ-ম্যাজিষ্ট্রেসী সম্মেলনে। উক্ত সম্মেলনের বক্তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলার এরকম অসঙ্গতি হ্্রাসের তাগিদ দিয়েছেন।
কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দা হোসনে আরার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সম্মেলনে বক্তারা বিচার ব্যবস্থায় যে কোন ভাবে সহজিকরণ পদ্ধতি অনুস্মরণ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন-‘আমাদের একযোগে লড়তে হবে দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থার জন্য। কেননা এদেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আদালতে আসার প্রয়োজন হয় না। আদালতে আসতে বাধ্য হয় নতুবা বাধ্য করা হয় দরিদ্র ও নিরীহ লোকজনকে। তাই স্বচ্ছতার মাধ্যমেই নিরীহ লোকগুলোকে আইনের সহযোগিতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য একটি মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত নির্ভুল পদ্বতি অনুস্মরণ করা অত্যন্ত জরুরি। ’ সভায় বলা হয় শুধু মাত্র ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে ২৭ হাজার ৯৫২ টি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ৫ হাজার ৬৩৮ টি সহ ৪১ হাজার ৭৫০ টি ফৌজাদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পুলিশ-ম্যাজিষ্ট্রেসী সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন-‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালতে সরকার পক্ষের সাক্ষী হাজির করার বিষয়টি এখন থেকে আমি নিজেই ত্বরান্বিত করব। যাতে করে মামলার জট কমে যায়। সেই সাথে মামলার তদন্তেও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করব।’ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন-‘ডাঃ সাইফুল ইসলাম নামের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সাবেক একজন চিকিৎসক একাই মামলা মোকদ্দমায় এত বিপুল সংখ্যক সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন যে তার সাক্ষ্যের অভাবে ৬০/৭০ টি মামলার নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। নানা পদ্বতিগত ত্রুটির কারনে আমার আদালতে ২৪/২৫ বছরের পুরানো মামলা সহ ৬ শতাধিক হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে।’
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আবদুস সোবহান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) শাহ-ই-আলম, ডাক্তার আলমগীর মহিউদ্দিন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাহাউদ্দিন কাজী ও মহিউদ্দিন মুরাদ, সিনিয়র এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নুরুল মোস্তফা মানিক, সৈয়দ আহমদ, দিলীপ কুমার দাশ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ সৈয়দ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারেক, পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ ও এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইকুল আহম্মেদ ভুঁইয়া এবং কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্টানে কক্সবাজার জেলার ৮ টি থানার ওসি এবং বিচার বিভাগের সকল বিচারকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত