প্রকাশিত: ০৮/১১/২০১৪ ১১:১৭ অপরাহ্ণ
রোববার কামারুজ্জামানের ফাঁসি !

kamru
অনলাইন ডেস্ক :
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে জামাত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু রায় কার্যকরের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস-আইন ১৯৭৩-এর ২০ (৩) ধারা অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে সরকারের নির্বাহী আদেশে। ওই ধারায় বলা আছে, এই আইনের আওতায় পাওয়া দণ্ড কার্যকর হবে একমাত্র সরকারের আদেশ মতে। সরকার যেদিন চাইবে, সেদিনই মানবতাবিরোধী এ অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে। তবে আগামী রোববার দিনগত রাত ১২টার পরই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য একাটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ৪৭-এর ৩ ধারা অনুযায়ী প্রচলিত আইন তথা ফৌজদারি আইন ও সাক্ষ্য আইন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সংবিধানের এ ধারা অনুসারে কামারুজ্জামানের সামনে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগই রয়েছে। এখানেও কালক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে হলে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। আবেদনে আসামিকে অবশ্যই তার অপরাধের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে বিশ্বের কোনো দেশে এ ধরনের অপরাধ করে কেউ মার্জনা পেয়েছেন বলে রেকর্ড নেই।

সংবিধানের ৪৭ (ক)-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধানে যাহাই বলা হউক তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানে ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীনে কোনো প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করিবার কোনো অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না। ৪৭-এর (৩) ধারায় কী বলা আছে? এই ধারায় ‘গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোনো ব্যক্তিসমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ, কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান- সংবলিত কোনো আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। এ আইনে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনা করার কোনো বিধান নেই। যেহেতু এই আইনের ভিত্তিতেই আপিল হয়েছে, সেহেতু পুনর্বিবেচনারও সুযোগ নেই। তবে দণ্ডিত ব্যক্তির এখন আর একটিই সুযোগ আছে, তা হলো- দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। তিনি জানান, কামারুজ্জামানকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে হলে সেটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রথমে আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয় সেটা যাচাই-বাছাই করে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর মতো কিছু আবেদনে থাকে, তাহলে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে, অন্যথায় সেটা আইনমন্ত্রণালয়ই বাতিল করে দিতে পারে।

বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের ৭ দিন পর কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এই সময়ের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আসামি আবেদন না করলে ৭ দিন পর রায় কার্যকর করা হবে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার ৭ দিন পূর্ণ হবে আগামী রোববার। ওই দিনগত রাত ১২টার পর কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশের প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত রায়েই সাজা কার্যকর করা সম্ভব। আদালত যদি মনে করে সংক্ষিপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ যেভাবে খুশি আদেশ পাঠাতে পারে। মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে (মানবতা বিরোধীদের ক্ষেত্রে) জেল কোড এবং আপিল রিভিউ কিছুই প্রযোজ্য হবে না। সরকার যখন চাইবে তখনই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। এতে ৭ দিন ১৫ দিন বলে কোনো বিতর্ক হওয়ার অবকাশ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

এদিকে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায়ের পর ‘রিভিউয়ের সুযোগ’ নিয়ে যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল, কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার পরও একই প্রশ্নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু কাদের মোল্লার রিভিউ গ্রহণ করেনি আপিল বিভাগ, সেহেতু কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও সেটাই প্রযোজ্য হবে। কারণ একই অপরাধ ও অভিযোগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ সাধারণত আগের মামলার রেফারেন্সই অনুসরণ করে। সেই অনুযায়ী কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, এর আগে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের সুযোগ চান কাদের মোল্লা। পাশাপাশি রায় রিভিউ করে খালাসও চান তিনি। পরে শুনানি শেষে দুটি আবেদনই খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে ১২ ডিসেম্বর রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে গত সোমবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লীতে’ নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের দায়ে (তৃতীয় অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ একমত হলেও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে। গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে (চতুর্থ অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগে তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। দারাসহ ছয় জনকে হত্যার (সপ্তম অভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রেখেছেন। একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের (দ্বিতীয় অভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তবে ৪ নম্বর অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ ওই অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। বদিউজ্জামানকে হত্যার (প্রথম অভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আপিলে এই অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

পাঠকের মতামত

  • বৌদ্ধ তারুণ্য সংগঠন- সম্যক এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
  • টেকনাফে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
  • কর্মক্ষেত্রে অনন্য কক্সবাজারের একমাত্র নারী ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন
  • টেকনাফে অর্ধডজন মামলার আসামি ডাকাত আবুল খায়েরসহ গ্রেপ্তার-২
  • ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারসহ ৫৬ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • চকরিয়ায় থানার সামনে সাংবাদিকের উপর হামলা
  • রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি হত্যা মামলার ৪ আসামী গ্রেফতার
  • বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদ-ট্রাষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠিত
  • উখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু