প্রকাশিত: ২৬/১০/২০১৪ ৬:৪১ অপরাহ্ণ

images4
মুহাম্মদ হানিফ আজাদ, উখিয়া:
উখিয়ার ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির এখন সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্থানায় পরিণত হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ছাড়াও সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ লোকজন। সন্ত্রাসীরা দিনের বেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করে রাতের আধাঁরে শিবির অভ্যন্তরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ত্রাস চালিয়ে থাকে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। গত ৩ রাতে বস্তির রোহিঙ্গা ঝুঁপড়ির ৩ শতাধিক অসহায় রোহিঙ্গাকে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে তাদের নিকট থেকে গণহারে চাঁদা আদায় করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯১ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বেশির ভাগ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত গেলেও কুতুপালং এলাকায় বনভূমির জমি দখল করে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক। বিগত ৬ মাস আগে ক্যাম্পের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবু ছিদ্দিক ওরফে জঙ্গি ছিদ্দিক ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করে ক’দিন আগেই আবারো কুতুপালং ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। তার নেতৃত্বে ডাকাত ছৈয়দ, মনির আহমদ, ডাঃ আবদুল্লাহ মিলে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে রোহিঙ্গাদের মাঝে চালাচ্ছে স্টিম রোলার। সন্ত্রাসীদের চাহিদা মত চাঁদা দিতে না পারলে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো হয় মধ্যযোগীয় কায়দায় বর্বরোচিত নির্যাতন। সন্ত্রাসীরা নিরীহ রোহিঙ্গাদের মানষিক ও শারিরীক নির্যাতনের পাশাপাশি উঠতি বয়সের নারীদের জোর পূর্বক ধর্ষন করে থাকে বলেও একাধিক ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা আরও জানান, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ওই সব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা গড়ে তুলেছে মিনি পতিতালয় এবং গড়ে তুলেছে মদ ও গাঁজা, ইয়াবার স্বর্গরাজ্য। ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পের চারপাশে ঘেরা-বেড়া না থাকায় ক্যাম্পটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসীদের সাথে বহিরাগত সন্ত্রাসীরাও হাত মিলিয়ে মাঝে-মধ্যে বৈঠক করে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা দিনের বেলায় ক্যাম্প অবস্থান করলেও রাতের বেলায় ক্যাম্পের বাইরে এসে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী মূলক কর্মকান্ড করে থাকে। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হাতে সাধারণ রোহিঙ্গা ও এলাকাবাসীরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্ত্রাসীদের এসব অপকর্মের কাহিনী জানা যায়।

বস্তিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ই-২ ব্লকের চেয়ারম্যান ফরিদ জানান, গত বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার রাতে সন্ত্রাসী আবু ছিদ্দিকের নেতৃত্বে সি-১ ব্লকের দোকানদার জাফরের নিকট থেকে ১৩ হাজার, লালু মাঝির নিকট থেকে ১০ হাজার, মোহাম্মদ নুরের নিকট থেকে ১১ হাজার, মোঃ আলমের নিকট থেকে ৫ হাজার, মাষ্টার ফখরুল ইসলামের নিকট থেকে ১৫ হাজার, মোঃ সালামের নিকট থেকে ১টি মোবাইল সেট ও ৩ হাজার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মাষ্টার রাকিবুল্লাহ জানান, ওই সব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় স্থানীয় গ্রামবাসীও অতিষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের অত্যাচারে।

বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার রাতে ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা ৩ শতাধিক অসহায় রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে গণহারে চাঁদা আদায় করেছে। যারা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদেরকে মারধর সহ নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়েছে। শুধু ওই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গণহারে চাঁদাবাজী ছাড়াও মালয়েশিয়ায় মানব পাচার, পতিতাবৃত্তি, ইয়াবা পাচার, মদ ও গাঁজা বিক্রি সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে থাকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল আলম বলেন, কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অসহায় রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে চাঁদা উত্তোলনের কথা শুনেছি। বস্তি এলাকা আমাদের আওতার বাইরে থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কারণে রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকার লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে চুরি, ডাকাতি সহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ওই সব সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত 

পলাশ বড়ুয়া:: কক্সবাজারে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। ভাষা দিবসের কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা ...