প্রকাশিত: ১৬/১০/২০১৪ ১২:১৮ অপরাহ্ণ

ফারুক আহমদ, উখিয়া::
উখিয়ায় সরকারি আইনকে অমান্য করে বাল্য বিবাহ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দায়িত্ব প্রাপ্ত বেসরকারি এনজিও সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগীতার কারনেই বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না এমন অভিমত সু-শীল সমাজের। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স বৃদ্ধি করে ভূঁয়া জন্ম সনদ তৈরী করে সংগ্রহ করার কারনে বাল্য বিবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকার বাল্য বিবাহ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ সহ নীতিমালা প্রণয়ন করলেও উখিয়ার প্রশাসন এক্ষেত্রে খুবই অনিহা। গত ১৩ অক্টোবর উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ্রুমখাঁ নাপিত পাড়ার (বউ বাজার) এলাকায় ২জন স্কুল ছাত্রীর বাল্য বিবাহ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিবাহের দিন খবর পেয়ে উখিয়া থানার পুলিশ বিবাহের আসরে হানা দিলে বরযাত্রীরা পালিয়ে গেলেও মেম্বার স্বপন শর্মা রণির সহযোগীতায় পরবর্তীতে উক্ত বিবাহ সম্পন্ন হয়। ওই দিন মরিচ্যা পালং মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ও অমুল্য শর্মার মেয়ে বৃষ্টি শর্মা এবং একই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ও বিনঞ্জয় শর্মার মেয়ে রিখা শর্মার বিবাহ হয়েছে।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলের সার্টিফিকেট অনুযায়ী বৃষ্টি শর্মার জন্ম তারিখ ১৫/০২/২০০১ইং অর্থাৎ তার বয়স ১৪ ৮ মাস এবং রিখা শর্মার জন্ম তারিখ ১৫/০৮/১৯৯৯ ইং অর্থাৎ তার বয়স হয় ১৫ বছর ২ মাস। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের কম হলে কোন মেয়েকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। কিন্তু উখিয়ায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বাল্য বিবাহ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধুরুমখালী নাপিত পাড়া গ্রামে একই দিন ২টি বাল্য বিবাহের ঘটনা নিয়ে সর্বত্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের পরিচালক শফিউল আলম বয়স বৃদ্ধি করে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওয়ার্ড মেম্বারদের চাপের মুখে আমি এ সনদ দিয়েছি। স্থানীয় গীতা স্কুলের শিক্ষক রুপন শর্মা ও রাজীব শর্মা জানান, আমরা এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগীতায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। তাই গ্রামে এ ধরনের অপ্রাপ্ত বয়সের স্কুল ছাত্রীদেরকে বিবাহ দেওয়ার বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানানোর পরও তা বন্ধ গ্রহণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিবাহ নিবন্ধক ডাঃ আশীষ এ প্রতিবেদককে বলেন, স্কুল ছাত্রী ২ জনের বয়স কম হওয়ায় আমি তাদেরকে বিবাহের নিবন্ধন করি নাই। তারমতে এর পরও বিবাহ হওয়া খুবই দুঃখজনক। প্রশাসন একটু তৎপর হলে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যেত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ওই এলাকার ইউপি মেম্বার স্বপন শর্মা রণির রহস্যজনক ভূমিকার কারনে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এপ্রসঙ্গে মেম্বার স্বপন শর্মা রণি বলেন, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টির সাথে একই এলাকার এক যুবকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় এভিডেভিট মুলে বিবাহ হওয়ায় কেবল আমরা সামাজিক ভাবে বসে বউ-ভাতের আয়োজন করে তা নিষ্পত্তি করেছি। পুলিশ এসে বিষয়টি তদন্ত করেছে। বাল্য বিবাহে আমার কোন সহযোগীতা ছিল না। এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের উখিয়া কর্মকর্তা জানান, স্কুল ছাত্রী বৃষ্টি শর্মা ও রিখা শর্মার স্কুল সার্টিফিকেট এবং জন্ম সনদ সংগ্রহ করে ২ সপ্তাহ পূর্বে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। এব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ অংসা থোয়াইন বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। খবর পেয়ে বাল্য বিবাহ বন্ধে নাপিত পাড়া গ্রামে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছিল। সমাজের লোক জন এগিয়ে না আসলে বিবাহ বন্ধ করা যায় না।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত 

পলাশ বড়ুয়া:: কক্সবাজারে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। ভাষা দিবসের কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা ...