ডেস্ক : হঠাৎ করে মারাত্মক শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এক চীনা পুরুষ। মূত্রের সঙ্গে যাচ্ছিল রক্ত। তার পাকস্থলীতে ছিল প্রচণ্ড ব্যথা। এক পর্যায়ে তার জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দেখা দিল এ জটিলতা। শেষ পর্যন্ত তিনি ছুটে গেলেন ডাক্তারের কাছে। কিন্তু ডাক্তার যা বললেন, তা শুনে তার তো চোখ আকাশে উঠে গেল।
ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে বললেন, তিনি আসলে পুরুষ নন, একজন মহিলা! তার যে রক্তপাত হচ্ছে, তা নিয়মিত মাসিকের স্রাব! চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের ৪৪ বছর বয়সী সেই ভদ্রলোকের নাম চেন। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গিয়ে এই তথ্য শুনে বিস্ময়ে হতবাক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
এতে আরও বলা হয়, পূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন যে, তিনি আসলে পুরুষাঙ্গ সহ মূলত পূর্ণ স্ত্রী প্রজননতন্ত্র নিয়ে জন্মেছেন! অথচ তার মতে, তিনি ১০ বছর ধরে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সক্রিয় যৌন জীবনযাপন করছেন। কিন্তু ডাক্তাররা তার কথায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ডাক্তাররা খুঁজে পেয়েছেন যে, তার যৌনাঙ্গ আর দশজন পুরুষের চেয়ে ভিন্ন।
এমনকি পুরুষদের যেমন কণ্ঠমনি আছে, তার তা নেই। স্থানীয় ফার্স্ট পিপল’স হাসপাতালের মুখপাত্র বলেছেন যে, ডাক্তাররা সন্দেহ করছেন চেন প্রথম থেকেই একজন নারী ছিলেন না। তিনি প্রথম থেকেই পুরুষের মতো পোশাক পরতেন ও চুল ছোট রাখতেন। তাই আমরা মনে করি না যে, তিনি প্রথম থেকেই একজন মহিলা।
তবে চেন বলেছেন, তিনি জানতেন তার কোন কিছুতে সমস্যা আছে। কারণ তিনি ক্রমাগত ফোলা মুখ ও পা নিয়ে অবসন্ন হয়ে পড়ছিলেন। এমনকি তিনি নিয়মিত প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত দেখতে পেতেন। সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে, তার জরায়ু ও ডিম্বাশয় রয়েছে! এমনকি তার ক্রোমজোম পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তিনি নারীদের মতো এক্সএক্স ক্রোমজোম বহন করছেন। এর ফলে জেনেটিক্যালি তিনি মূলত নারী।
তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন উদাহরণ একেবারেই নেই যে তা নয়। পূর্ণ নারী বা পূর্ণ পুরুষ না হওয়ার এই বিরল সমস্যাকে বলা হয় ‘ইন্টারসেক্স’। কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যেই প্রতি দুই হাজার নবজাতকের মধ্যে ইন্টারসেক্স হওয়ার ঘটনা পাওয়া যায়। সে হিসাবে আনুমানিক যুক্তরাজ্যের ৩০ হাজার মানুষ ইন্টারসেক্স। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এই ধরনের মানুষ জেনেটিক্যালি মহিলা হলেও, শারীরিকভাবে পুরুষ!
ঠিক যেমনটা চেনের বেলায় হয়েছে। আবার এই ইন্টারসেক্স’দের অনেকেই উভলিঙ্গ হয়ে থাকেন। এদেরকে ‘হিজড়া’ বলা হয়। এরা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু- উভয়ই উৎপাদন করে। তবে চেনের বেলায় এখনও বলা যাচ্ছে না তিনি কি শুধু ইন্টারসেক্স নাকি উভলিঙ্গ। এই অতি বিরল রোগটি চিকিৎসায় সমাধান হবে কিনা বলা যাচ্ছে না। কারণ তরুণ বয়সে অর্থাৎ লক্ষণ দেখতে পাওয়ার পরপরই এসবের চিকিৎসা করতে হয়। কিন্তু চেন দেরি করে ফেলেছেন।
পাঠকের মতামত