অস্বাস্থ্যকর খাবারে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
অনুমোদনহীন বেকারিতে সয়লাব উখিয়া
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে উপজেলার বিভিন্ন স্টেশন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের ভিতরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অন্তত ২০টি বেকারি কারখানা। কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব বেকারি কারখানায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে খাবার।
উৎপাদিত খাদ্যের মান প্রণয়ন, গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে নেই কোনো ব্যবস্থা। উৎপাদিত খাবারে দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনও নেই এসব বেকারি পণ্যে। কয়েকটি বেকারিতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য করা গেছে গড়মিল।
জানা যায়, উপজেলার মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া, কোর্টবাজার, উখিয়া, টিএন্ডটি, কুতুপালং,বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি বেকারি কারখানা। কারখানাগুলোতে কোনো নিয়মনীতি না মেনে স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারির খাবার। অভিযোগ রয়েছে, সুস্বাদু ও মুখরোচক এসব খাবার তৈরি করতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, রং, নিম্নমানের পাম অয়েল, ঘি ও ডালডা ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকরা বিশেষ পোশাক ছাড়াই খালি হাত-পায়ে খাবার তৈরি করছে। এতে ধুলাবালি মিশছে প্রস্তুতকৃত খাবারে। প্যাকেটজাত করে উপজেলার বিভিন্ন স্টেশন ও এলাকায় হাজারো দোকানে সরবরাহ করা হচ্ছে এসব বেকারির খাবার।
সরেজমিন দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালং বালুখালী ও আশপাশের এলাকার বেকারিগুলোতে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। স্যাঁতসেঁতে, অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরির বিভিন্ন উপকরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা আছে। তৈরিকৃত খাবারের গায়ে মোড়ক লাগানো হলেও তাতে কোনো উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। একই নিয়মে একাধিক বেকারিতে উৎপাদন করতে দেখা গেছে মিষ্টি, সন্দেশ, বিস্কুট, কেক, বনরুটি, বাটার বনসহ নানা মুখরোচক খাবার।
এসব খাবার তৈরি করতে প্রায় বেকারিতে কর্মচারী হিসেবে রয়েছে রোহিঙ্গা শ্রমিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের এলাকার সকল বেকারি পরিচালনা করছে রোহিঙ্গারা।
শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার কুতুপালংয়ের বিশাল ক্যাম্প এলাকা জুড়ে রয়েছে ছোট বড় দোকান।
এসব দোকানে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের ভিতরেও গড়ে উঠেছে কয়েকটি বেকারি কারখানা।
পুরো উপজেলায় জনপ্রিয় ব্রেড নামক একটি বেকারি কারখানাতেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন রয়েছে।
বাকী সব চলছে ট্রেড লাইসেন্স ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের দেয়া লাইসেন্সে। একাধিক বেকারির মালিক জানান স্যানিটারি লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে বেকারি পরিচালনা করছেন তারা। স্যানিটারি লাইসেন্স দেখতে চাইলে নতুন বছরের মেয়াদ বাড়াতে জমা দিয়েছেন বলে জানান তারা।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি পালংখালীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসাইন বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স। যার ফলে ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি চরমভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এসব অনুমোদনহীন অবৈধ বেকারি কারখানাগুলোতে প্রশাসনের অভিযান জরুরি। শুধু অভিযানই নই, স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে প্রতিটি বেকারি কারখানা যাতে পরিচালিত ও বেকারি পণ্য তৈরি হয় সেব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করতে হবে।
এব্যাপারে জানতে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নুরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) যারীন তাসনিম তাসিন বলেন, বিভিন্ন বেকারিতে এর আগেও অভিযান চালিয়েছি। সামনের সপ্তাহে আবারও বিএসটিআই সহ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পাঠকের মতামত