• জড়িত ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা • গুদাম সিলগালা • মাস্টার রোল ও ভিজিডি কার্ড জব্দ
ভিজিডি চাল আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে!
বিগত বছরের চাল চলতি বছরেও না দেয়া, চলতি বছরের চাল বিতরণে সুক্ষ্ম কারচুপি ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদসহ নানান অভিযোগে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের চাল বিতরণের মাষ্টার রোল ও ভিজিডি কার্ড জব্দ করা হয়।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরীর নির্দেশে, উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ হাবিবা জাহান জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেন। এসময় চাল বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গুদাম সিলগালাসহ মাস্টার রোল ও ভিজিডি কার্ড জব্দ করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, বিগত বছরের চাল চলতি বছরের শেষ মাসেও পায়নি তারা। এছাড়া চলতি মাসে ২-৩ মাসের চাল বিতরণও বাকী আছে অনেকের। চেয়ারম্যানের কাছে গতবাছরের চালের কথা বললে সে শেষ হয়ে গেছে বলে চলে যেতে বলেন। চলতি বছরের বাকী চাল কবে দেবে জিজ্ঞেস করলে পরে জানানো হবে বলে উপকারভোগীদের চলে যেতে বলেন। আবার অনেকের অভিযোগ, তিনমাসের সাক্ষর ও টিপসই নিয়ে একমাসপর চাল দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বেশিরভাগ উপকারভোগীর চালের কার্ডে বিতরণকারীর সাক্ষর থাকলেও নেই সীল বা টিপসই। কিন্তু মাস্টার রোলে চাল বিতরণ করা হয়েছে এমনটা উল্লেখ করে সাক্ষর ও টিপসই দেয়া আছে।
স্থানীয়রা জানান,”৯টি ওয়ার্ডের চাল বিতরণ শেষে অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৫শ বস্তা চাল মজুদ রাখা হয়। যা হতদরিদ্রদের মাঝে বিভিন্ন অজুহাতে বিতরণ না করে মজুদ করে রাখা হয়েছিলো।
সূত্র আরও জানায়, জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের টেক অফিসার, ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এসবে সরাসরি জড়িত।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানান, ১নং ওয়ার্ড ছাড়া সকল ওয়ার্ডে চাল বিতরণ শেষ। ১ নং ওয়ার্ডে উপকারভোগী আছে ৫৭৫ জন, কিন্তু চাল মজুদ আছে ৯শ বস্তা। এই অভিযোগে এসিল্যান্ড এসে বৃহস্পতিবার গুদাম সীলগালা করেছিলো। আজকে ১নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণ করার পরেও ২৯১ বস্তা অবশিষ্ট রয়েছে। এছাড়া বস্তা নষ্ট হওয়া ১৯ বস্তা চাল গুদামে রয়েছে।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, যে উপকারভোগীদের কার্ডে খালিঘর (মাসভিত্তিক) রয়েছে তারা চাল পয়নি। তারা সকলেই চাল পাবে। তবে কিছু জটিলতার কারণে একটু গড়মিল হয়েছে। মাস্টার রোল অনুযায়ী চাল দেওয়া হয় না। সেখানে ভুল থাকতে পারে।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম ছৈয়দ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত তিন বছর যাবৎ আমি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিছু লোক আমার মানক্ষুন্ন করার জন্য এসব করতেছে। চাল বিতরণের শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আছে। গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে আমি সকল ওয়ার্ডে বার্তা পাঠিয়েছি। যাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডের যারা এখনো চাল সংগ্রহ করেনি তারা ৩১ তারিখের মধ্যে চাল সংগ্রহ করতে পারে।
উখিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আমরা পরিষদে গিয়েছি। আমরা সমস্ত অভিযোগ শুনেছি। চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গুদাম সিলগালা ও নথি জব্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। উপজেলার প্রতিনিধি পাঠিয়ে গুদাম সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। সাথে চাল বিতরণের মাস্টার রোল ও ভিজিডি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে তদন্ত পূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগীদের চাল বিতরণ না করে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার(২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসনিম তাসিন গুদাম সিলগালা করে দেন।
পাঠকের মতামত