এলাকাবাসীর বিক্ষোভ, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ভাঙচুর
টেকনাফে জামায়াত নেতাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা
কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা ইয়াবা বড়ি দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার পাশাপাশি সাদা পোশাকে টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী টেকনাফ পৌরসভার সহসভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইলকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল শহরে প্রদক্ষিণ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয় ভাঙচুর চালায়।
মোহাম্মদ ইসমাইল টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া বাসিন্দা মৃত নুর আজিজের ছেলে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ৬টার দিকে টেকনাফ পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ জালিয়াপাড়া এলাকায় মোহাম্মদ ইসমাইলের বাড়িতে সাদা পোশাকে অভিযানে যাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। তারা ঘর থেকে ইসমাইলকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। তখন স্থানীয় লোকজন সাবেক কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতাকে ছিনিয়ে নেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন,সোমবার সন্ধ্যায় সাদা পোশাকে আমার বাড়িতে ৪জন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্য এসে আমাকে আটক করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন আমার পরিচয় দিলে আমাকে আটক করে নিয়ে যেতে চাই। তখন আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সদস্য বলে পরিচয় দেন। পরে আমাকে কোন অভিযোগে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা অফিসে গেলে জানতে পারবেন বলে তুলে নিয়ে যেতে চান। তখন স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই দলটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আমি ঘটনার সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পরে রাত ৮টার দিকে স্থানীয় জনতা জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টেকনাফ বাস স্টেশনের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে টেকনাফ পৌরসভার হোটেল নিউ গার্ডেনে অবস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাযালয়ে ঘেরাও করে এবং স্থানীয় জনতা লাঠিসোটা নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। স্থানীয় লোকজন ও বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে স্লোগানে বলেন, ডিএনসির গালে গালে জুতা মারো তালে তালে, টেকনাফ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাহার চাই বলে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হোটেল নিউ গার্ডেনের মালিকের ছোট ছেলে আব্দুল আজিজ বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা দ্বিতীয় তলার সবকটি কক্ষগুলো ভাড়া নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। আজ সোমবার বিকেলের দিকে তারা একটি অভিযানে যান। সেখানে একজন ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেন স্থানীয় লোকজন। পরে মাদকদ্রব্যের সদস্যরা হোটেলে ফিরে এসে পুনরায় সকলেই বাহির হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে বিক্ষোব্ধ জনতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিপক্ষে স্লোগান দিয়ে হোটেলের সামনে এসে হোটেলের জানালার ভাঙচুর চালায়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্যের সদস্যরা এখন পর্যন্ত হোটেলে আসেনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ জোনের সহকারী পরিচালক সিফাত তাসনিমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এর আগে বিক্ষোভ কারীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয় (হোটেল নিউ গার্ডেন) ভাঙচুর চালিয়েছে । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও হোটেল মালিকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে হামলার ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি পাঠানো হয়েছে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত