ব্যবসায় মন্দা
বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দিতে চান কলকাতার ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে ভারতে বিক্ষোভ ও দেশটির গণমাধ্যমে একের পর এক অপপ্রচারের জেরে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। আর তার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন খাতে। প্রায় শূন্যে নেমেছে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা। তাতেই মাথায় হাত নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, বাংলাদেশিরা পর নয়, বরং তাদের ঘরের লোক। তাই বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।
ঢাকা-দিল্লি উত্তপ্ত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বাংলাদেশি পর্যটকদের বয়কটের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কিছু হোটেল। কিন্তু কলকাতা নিউমার্কেটের মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, নিউমার্কেট ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন এবং হোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই পথে হাঁটবে না। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করবো না। তারা যেন নিশ্চিন্তে এখানে আসেন। যতটা পারবো তাদের নিরাপত্তা দেবো।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়।
মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার বলেন, নিউমার্কেট মূলত বাংলাদেশনির্ভর এলাকা। বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে এখানকার মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল ও পর্যটক ব্যবসা চলছে। তাদের অনুপস্থিতি আমাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে। যদিও আমরা বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যটক হিসেবে দেখি না, তারা আমাদের ঘরের সদস্য।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকদের যে ঢল ছিল, সেটা এখন নেই। এর কারণে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
কলকাতার এমআরএল হোটেলের মালিক মনতোষ সরকার বলেন, আমার হোটেলে ৮০ শতাংশ পর্যটক থাকেন বাংলাদেশি। কিন্তু ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পর্যটক আসছেন খুবই কম।
তিনি বলেন, সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। কিন্তু সেদিকে কান না দিয়ে বাংলাদেশি পর্যটকদের বলবো, এখানে আসুন। দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের উভয় পক্ষকেই সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলী হোসেইন শেখ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আমার ব্যবসা ডুবতে বসেছে। তিনি ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে বাংলাদেশের চাহিদা মিটছে না। মাল্টিপল ও এমপ্লয়মেন্ট ভিসা চালুর দাবি জানান তিনি।
সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ কামরুদ্দিন মালিক বলেন, এখানে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ নেই। বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আমি তাদের বলবো, নিশ্চিন্তে আসুন।
গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিক সঞ্জয় মজুমদার বলেন, নিউমার্কেটে প্রচুর হোটেল ও দোকান রয়েছে। বাংলাদেশি পর্যটক না আসায় সেগুলোর ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে।
অবনী ঘোষ বলেন, কিছু খবরের কারণে দুই পাড়েই প্রভাব পড়ছে। তিনি আশা করেন, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।
সবশেষ তিনি বলেন, ‘অতিথি দেবো ভব’ অর্থাৎ অতিথি হলো দেবতুল্য। আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করবো না এবং যতটা পারবো তাদের নিরাপত্তা দেবো।
পাঠকের মতামত