প্রতিষ্ঠানে অচল মেশিন স্থাপন, কাঠে দুই নম্বরি, চাইনিজ রেস্তোরাঁর ম্যামোতে ফল, কেক ও মিষ্টির নাম, বই সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন এবং উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই বাজার দরের চেয়ে অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা হয়েছে যন্ত্রপাতি। ১১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে অনিয়ম পাওয়া গেছে ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬০ টাকার, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৬ শতাংশ। অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এমন চিত্র উঠে এসেছে দেশের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে। ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার বিমল কৃষ্ণ মৃধা বিস্তর অনিয়মের চিত্র তুলে এনে প্রতিবেদন জমা দেন। অনিয়মের প্রতিবেদনের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৫ একর জমির ওপর জীবনমুখী শিক্ষা প্রসারে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যা শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। এসময়ের মধ্যে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি আবাস, প্রিন্সিপাল কোয়ার্টারসহ আরও বেশকিছু ভবন নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের কাজের ওপর ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি অডিট পরিচালনা করে অডিট অধিদপ্তর। অডিটে ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬০ টাকা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।
আপত্তির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) অনুমোদিত দরের অতিরিক্ত দরে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে তিন কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪০৭ টাকার নিম্নমানের আসবাবপত্র ফ্যানকন ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বিধিসম্মত নয়। এ কারণে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে মেশিনপত্র স্থাপন ও সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা ছাড়াই শতভাগ বিল পরিশোধ করায় ২৪ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ও যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ আরও ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনিয়মিতভাবে ব্যয় করা হয়েছে, যা অডিট প্রতিবেদনে দায়ী (প্রকল্প পরিচালক) ব্যক্তির কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কম্পিউটার ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৮ হাজার ৯৯৫ টাকা, বই সরবরাহ না করেই ২১ লাখ ১৮ হাজার ৭০৫, সম্মানী বাবদ ১১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫০, নকল ক্যাশ ম্যামো দেখিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৫২ ও পরিশোধিত বিভিন্ন বিল থেকে ভ্যাট কর্তন না করায় ৬ লাখ ২৯ হাজার ১ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করা আবশ্যক বলে সুপারিশ করেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার বিমল কৃষ্ণ মৃধা।
প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুনে শেষ হলেও উত্থাপিত অডিট আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি এখনো শেষ হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো তোড়জোড়ও দেখা যাচ্ছে না। অডিট রিপোর্ট বলছে, চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ বিল পরিশোধ করা বিধিসম্মত হয়নি।
পাঠকের মতামত