আলাউদ্দিন, উখিয়া—
আরেক ঢলেই ভেসে যাবে নয়তো পরের কোনো ধাক্কায় পড়ে যাবে, এমন অবস্থা কালভার্টের। প্রায় ২০ বছরের পুরোনো এই কালভার্টে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে; বর্তমানে হালকা-প্রকৃতির পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কালভার্টটি কবেই যে ধপাস করে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাস্তাটিও টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত প্রায়।
এই রাস্তা উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড হয়ে থাইংখালী, গৌজঘোনা ও ধামনখালীকে সংযোগ করেছে। দীর্ঘদিনের অবহেলিত একটি রাস্তা এটি। এই কাঁচা রাস্তাটিতে গাড়িচলাচল বন্ধ হয়েছে আগেই; এখন চরম ঝুঁকি নিয়ে কালভার্ট পার হচ্ছে নিরুপায় পথচারীরা। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট কাদার কারণে রাস্তাটিরও এমন বেহাল দশা যে, কোনো বাহন তো চলতেই পারে না; পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোনো জো নেই। প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।
থাইংখালী উত্তর স্টেশন-সংলগ্ন কবরস্থানের পূর্বদিকে গৌজঘোনা গ্রাম হয়ে থাইংখালী উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠ ঘেঁষে রাস্তাটি সীমান্ত এলাকা ধামনখালী পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই রাস্তার শুরু থেকে শেষের মধ্যবর্তী বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নানা কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে শত শত পথচারী, কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী, কলেজশিক্ষার্থী, শিক্ষক, এনজিওকর্মী, খেলোয়াড়-দর্শক, এলাকাবাসীসহ ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
দীর্ঘদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। এই রাস্তা পাকা হতে আর কতশত প্রহর গুনতে হবে, এমন প্রশ্ন এলাকার সচেতনদের।
অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রাস্তা। দেখে মনে হয় চাষের জমি। রাস্তা দিয়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না জরুরিসেবাপ্রদানকারী কোনো বাহন। কাদাযুক্ত রাস্তা মাড়িয়েই চলাফেরা করছে মসজিদের মুসল্লি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পথচারী ও বাজারমুখী মানুষ। তার ওপর এলাকায় যাতায়াতের আর কোনো বিকল্প রাস্তা না থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রীতিভোজ ও আত্মীয়দের বাড়িতে কোনো অতিথিও আসতে পারছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তবে আশার প্রতিফলন ঘটাতে রাস্তাটি পাকা হওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল চলতি বছরের শুরুর দিকে। শেষ হওয়ার কথা ছিল এই বছরের জুন মাসেই। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সন্তোষজনকভাবে এগোয়নি কাজ; বরং শুরুর দিকেই রয়ে গেল প্রকল্প। বিপরীতে বর্ষার ঢলে ভেসে গেছে রাস্তায় দেওয়া ইট, বালু।
এরই মধ্যে স্থানীয়দের বারংবার অভিযোগে রাস্তাটি পরিদর্শন করে গেছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান খান। এ সময় তিনি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
কোন অর্থবছরে এই রাস্তাটি পাকা হওয়ার টেন্ডার হয়েছিল জানতে চাওয়া হলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, সেটি ডকুমেন্টস দেখে বলতে হবে। তবে ফাটল ধরা কালভার্টসহ ওই রাস্তায় যতটি কালভার্ট দরকার হয়, তা তিনি ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্ষার কারণে আটকে গেছে প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কালভার্ট ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি রাস্তা পাকা করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান।
পাঠকের মতামত