টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মুখে পালিয়ে আসার পথে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফে নাফনদীতে ভেসে আসা শিশুসহ আরও ১৭ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের তিনটি পয়েন্ট থেকে ১৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে মৃতদেহগুলো মসজিদ-মাদ্রাসা ও স্কুল-মাদ্রাসাপড়ুয়া তরুণদের সহায়তায় স্থানীয় কবরস্থানে দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।
দাফন কাজে নিয়োজিত থাকা শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ সালমান বলেন, ‘নাফনদী ভেসে আসা ১৭ রোহিঙ্গার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মৃতদেহগুলো দাফনের কাজ চলছে। আমার ভাগে আজকে ১১ জনের দাফনের দায়িত্ব রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা চার জনের মৃতদেহ দাফন সম্পন্ন করেছি। বাকিদেরও কাজ চলছে। এ ছাড়া ডাঙাপাড়া কবরস্থানে আরও ৭ জনকে দাফন করছে আরেকটি দল।’ তার কথায়, ‘একমাত্র আল্লাহকে রাজি (সন্তুষ্ট) করতে আমরা এই কাজ করছি।’
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া ও রাজারছড়া পয়েন্ট এলাকার সাগরে শিশুসহ ৯ রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
নাফনদী থেকে রোহিঙ্গাদের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গনি। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে টেকনাফ উপকূলে রোহিঙ্গাদের বহনকারী দুটি নৌকা সাগরে ডুবে যায়।
ওসি বলেন, ‘সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় জেলে ও স্থানীয়রা আজকে আরও ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। যেহেতু বাংলাদেশে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি রয়েছে। তাই আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে মরদেহগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যাদের স্বজনরা মরদেহ নিতে আসছেন, তাদের হস্তান্তর করা হচ্ছে। বাকিদের দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আবদুল মন্নান ও আবদুস সালাম বলেন, ‘বুধবার দুপুরে নাফ নদে ভেসে আসা থেকে শিশুসহ ১৭ রোহিঙ্গার মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে কথা বলে তাদের স্থানীয়ভাবে দাফন করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া গতকাল (মঙ্গলবার) আরও পাঁচ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।’
এদিকে, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি বর্তমানেও চলমান রয়েছে এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘বুধবার বিকাল থেকে সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। বৃষ্টির মধ্যেও ওপারের গোলার বিকট শব্দে এপারের সীমান্ত কেঁপে উঠছে।’
সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নাফনদীতে ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ স্থানীয়রা উদ্ধার করেছে। যেহেতু এখনও মিয়ানমারে যুদ্ধ চলছে। তাই আমরা সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থা রয়েছি, যাতে কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে।’
পাঠকের মতামত