মাঠে ছিল না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
আলাউদ্দিন, উখিয়া—
এক দফা দাবি নিয়ে সারা দেশের ন্যায় উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজারে ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলন-কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা আড়াইটায় কোর্টবাজার স্টেশন পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
এদিকে আন্দোলনের একপর্যায়ে কোর্টবাজার স্টেশনে অবস্থিত ট্রাফিকপুলিশের বক্সে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। মুহুর্মুহু ইট-পাথর নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুলিশবক্স। তবে সেখানে কোনো পুলিশসদস্যের উপস্থিতি ছিল না। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইট-পাথরের আঘাতে কয়েকটি দোকানের কাঁচ ভেঙে যায়। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে বিভিন্ন প্রতিবাদী বাক্য লেখা ও ছবিযুক্ত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বেলা আড়াইটায় কোর্টবাজারের ঝাউতলা রাস্তার মাথা থেকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি কোর্টবাজার দক্ষিণ স্টেশন থেকে শুরু হয়ে উত্তর স্টেশন প্রদক্ষিণ করে পরে চৌরাস্তার মোড়ে এসে সেটি সমাবেশে পরিণত হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। আন্দোলন চলাকালে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ ছিল।
‘দফা এক দাবি এক’ স্লোগানে মুখরিত সমাবেশে আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন।
সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মিছিলে যোগ দেন খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনসাধারণ।
চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে হত্যা, হামলা, মামলা ও গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সমাবেশ থেকে প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। সমাবেশ চলাকালে বৃষ্টি নামলেও রাজপথ ছেড়ে চলে যাননি তারা। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
কোর্টবাজারে এবারের ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকেই দেখা যায়নি। এমনকি দেখা যায়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীদের। ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষের সুযোগও সৃষ্টি হয়নি। তবে এদিন আন্দোলনে বিরোধী দলগুলোর কিছু কিছু প্রথমসারির নেতৃবৃন্দকে সমাবেশের আশপাশে সংহতি জানাতে দেখা গেছে।
এদিকে পুলিশবক্সে হামলার বিষয়ে আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ছাত্রলীগকে দায় দিয়েছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা আন্দোলনের একপর্যায়ে হামলা হয় কোর্টবাজারের ট্রাফিকপুলিশের বক্সে। আন্দোলনের এক ফাঁকে আচমকা ভাঙচুর শুরু হয় সেখানে। ভাঙচুরের পর কর্মসূচির সমাপ্ত ঘোষণা করেন সমন্বয়কারীরা।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই ভাঙচুর চালিয়েছেন অভিযোগ করে সমন্বয়কারীরা বলেন, ছদ্মবেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওরাই ভাঙচুর চালিয়েছে। আন্দোলনকারীরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত নেই বলে দাবি করেছেন তারা।
এদিকে ভাঙচুরের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে দুর্বৃত্তরা হুমকিধামকি ও বাধা দেন এই প্রতিবেদককে।
ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন বলেন, যখন ভাঙচুর হয় তখন আমাদের নেতা-কর্মীরা উখিয়া স্টেশনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ছিলেন। এর প্রমাণস্বরূপ আমাদের কাছে ছবি-ভিডিয়ো আছে। কোর্টবাজারে ছাত্র আন্দোলনের সময় আমরা সেখানে ছিলাম না। হামলার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, বেলা দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আমরা কোর্টবাজারে অবস্থান করেছিলাম। এর পরে বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে উখিয়া স্টেশনে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দিই।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় গতকাল রোববার বেলা তিনটায় উখিয়ায় আওয়ামী লীগের শোকর্যালি ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। এ ছাড়াও উপজেলার স্ব স্ব ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, পুলিশবক্স ভাঙচুরের বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। এ ঘটনায় এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিস্তারিত পরে জানাবেন বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
পাঠকের মতামত