নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এখনো পানির নিচে রয়েছে শত শত একরের চিংড়ি, কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যঘের। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পালংখালীর মৎস্যচাষী, ঘেরমালিক ও ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেলে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া, নলবনিয়া, রহমতেরবিল ও ধামনখালী এলাকায় প্রায় দুই হাজার একর চিংড়িঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে মৌলভী আব্দুল লতিফ ওয়াক্কফ এস্টেটের ১৪টি প্রকল্পে অন্তত ১০ কোটি ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে মৎস্যচাষীদের হিসাবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
প্লাবনে প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে বাগদা, গলদা, কোরাল, টেংরা, লইল্যা, বাইলা, তেলাপিয়া, বাটা, খরুল ও রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়াসহ প্রভৃতি প্রজাতির মাছ। ঘেরগুলো এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
মৌলভি আব্দুল লতিফ চৌধুরী ওয়াকফ্ এস্টেটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব লতিফ আনোয়ার চৌধুরী (প্রকাশ খোকামিয়া) জানান, মৎস্যচাষী ও কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের পুনর্বাসন ও সহায়তার দাবি জানান তিনি।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফরুল ইসলাম (বাবুল) জানান, আবুল খায়ের গংয়ের ফাঁসিয়াখালী চিংড়িঘেরে ২০ লাখ, আবুল কালাম গংয়ের পশ্চিম ভুলখালী ঘেরে ১০ লাখ, মুক্তার আহমদ গংয়ের পূর্ব ভুলখালী ঘেরে ১০ লাখ, বদিউর রহমান গংয়ের জিয়াতাখালী ঘেরে ১৬ লাখ, রমজান আলী গংয়ের গুইজ্জাখালী ঘেরে ১৮ লাখ, জাহাঙ্গীর আলম গংয়ের উত্তর নোয়াপাড়া ঘেরে ১০ লাখ, আনোয়ার কামাল গংয়ের উত্তর বাহারপ্যারা ঘেরে ১৫ লাখ, আব্দুর রহিম গংয়ের দক্ষিণ বাহারপ্যারা ঘেরে ১২ লাখ, একরাম গংয়ের দক্ষিণ নোয়াপাড়া ঘেরে ৫ লাখ, আজিজুর রহমানের কেরগৈয়াতলি ঘেরে ২০ লাখ, আবছার গংয়ের গুইল্লাখালী ঘেরে ১২ লাখ, মোহাম্মদ ইসমাইল গংয়ের লোইখুইন্না ঘেরে ১০ লাখ, বেলাল উদ্দিন গংয়ের হাওয়ারছড়া ঘেরে ৬ লাখ, রিজভি ফাঁড়ি (ডি) ঘেরে ৫ লাখ, কামাল হোসেন গংয়ের নোয়াপাড়া ঘেরে ৫ লাখ, আলমের গোদা নামক ঘেরে ৩ লাখ টাকা, অ্যাড. জামাল উদ্দিনের গোদা নামক ঘেরে ১০ লাখ, মোহাম্মদ রিফাত গংয়ের পূর্ব আমিত্তাপ্যারা ঘেরে ১০ লাখ, লুৎফুর রহমান গংয়ের পশ্চিম আমিত্তাপাড়া ঘেরে ৮ লাখ, আবছার কামাল গংয়ের দক্ষিণ প্যারা ঘেরে ১০ লাখ, আনোয়ার কাদের গংয়ের দরিন্নাগোদা নামক ঘেরে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফয়েজুল ইসলাম জানান, মোহাম্মদ কালো গংয়ের চাষকৃত উকিলের প্যারা নামক ঘেরে ২ লাখ, নলবনিয়া প্যারা নামক ঘেরে ৫ লাখ, সাম্পানঘাটা নামক ঘেরে ৫ লাখ ও গোল প্যারা নামক ঘেরের ৩ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
এ ছাড়াও সীমান্তের নাফ নদীঘেঁষা থাইংখালী, রহমতেরবিল ও ধামনখালী এলাকার বিস্তীর্ণ চিংড়িঘের তলিয়ে ভেসে গেছে চিংড়ি, কাঁকড়াসহ নানান জাতের মাছ।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ আহমদ জানান, টানা বৃষ্টির প্রভাবে রহমতের বিল ও ধামনখালী এলাকায় চিংড়ি ও মাৎস্যচাষীদের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কৃষকদের ধানের চারা ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে বেশি। মৎস্যচাষী ও ঘেরমালিকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে সমগ্র উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো, নিম্নাঞ্চলে ঘরবাড়ি, ইরি মৌসুমে কৃষকের বীজতলা, ধানের চারা ও মৎস্যঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য বলা হয়েছে, যাতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা যায়।
পাঠকের মতামত