নেমে যাচ্ছে পানি, দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষত
আলাউদ্দিন, উখিয়া —
টানা ভারি বর্ষণে উখিয়া উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের জন্য ৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। প্লাবনের তৃতীয় দিনে এসে গতকাল বৃহস্পতিবার এই বরাদ্দ হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে হলদিয়াপালংসহ বিভিন্ন এলাকায় জেলাপ্রশাসকের তত্ত্বাবধানে প্লাবিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী এই বরাদ্দকে অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন সমাজসচেতন ও অধিকারকর্মীরা।
উপজেলাজুড়ে সাকুল্যে ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পালংখালীর চিংড়ি, কাঁকড়া ও মৎস্যঘের মালিকরা। আঞ্জুমানপাড়ায় ১৫০০ একরের চিংড়িঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে লোকসানের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফয়েজুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফরুল ইসলাম বাবুল জানিয়েছেন— উকিলের চিংড়িঘের, নলবনিয়া চিংড়িঘের, সাম্পানঘাটা, গোলঘের, ফাঁসিয়াখালী, পশ্চিম বুলখালী, পূর্ব বুলখালী, জিয়াতাখালী, গুইজ্জাখালী, উত্তর নোয়াপাড়া, উত্তর বাহারপাড়া, দক্ষিণ বাহারপাড়া, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, কেওরগাতলি, গুইল্লাখালী, লোখুইন্না, হাওয়ারছড়া, ফাঁড়ি, নোয়াপাড়া, আলমের গোদা, জামালের গোদা, পশ্চিম আমিত্তাপাড়া, পূর্ব আমিত্তাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, দরিন্নাগোদাসহ বিভিন্ন চিংড়িঘেরে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা ধামনখালী ও রহমতেরবিলের মৎস্যব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে মাথায় হাত দিয়েছেন।
জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন— প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘর, রাস্তা, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কিছু কিছু পরিবারকে সংশ্লিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে একাধিক সড়ক।
রাজাপালংয়ের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, তার এলাকার কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টি পরিবার। চারটি সড়ক ছিঁড়ে তছনছ হয়ে গেছে। ফলে যানচলাচল ও পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভুক্তভোগীদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের খবর জানতে পেরেছেন তিনি। তবে কী পরিমাণ ভাঙন ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্য এই মুহূর্তে তার কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লিখিত আকারে তালিকা পাঠালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে তালিকা নিয়ে ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
গত সোমবার রাত, মঙ্গলবার ও বুধবারে বর্ষিত ভারি বর্ষণে এক মাসের ব্যবধানে ফের প্লাবিত হয় উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয় উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৪০ হাজার বাসিন্দা।
বানের পানি ঢুকে পড়ে নিচু ও উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাড়িঘর, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। পানি ঢুকেছে নিচু এলাকার বিভিন্ন স্টেশনে, দোকানপাটে। সাগর-নদী-নালা-খাল-বিলের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড় বেয়ে আসা পানি ঢুকে পড়ে ঢলে ঢলে।
নেমে যাচ্ছে পানি, দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন :
বৃহস্পতিবার তুলনামূলকভাবে বৃষ্টি কম হওয়ায় প্লাবনের পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। ফলে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। তবে কিছু কিছু নিম্নাঞ্চলে এখনো কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও ব্রিজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি কমে গেলে পানি নেমে গিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে জনপদ; না হলে আরও কয়েকদিন পানিবন্দি থাকবে নিম্নাঞ্চলের মানুষ৷
ভুক্তভোগীদের পাশে ছিলেন যারা :
বুধবার ও বৃহস্পতিবার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাদমান জামি চৌধুরী ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিন আক্তার বিভিন্ন এলাকায় বানভাসিদের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনসহ কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি মানুষের পাশে দাঁড়ালেও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের দেখা মেলেনি। তবে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন সড়কের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করেছে।
বর্ষার ঢলে আংশিক লাভবান যারা :
ভরা বর্ষায় জাল নিয়ে উজানে ওঠা মিঠাপানির মাছ ধরতে দেখা গেছে অনেককে। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালু উত্তোলন করেছেন কেউ কেউ। খাল, বিল ও ছড়া থেকে প্রচুর বালু ভেসে এসে ভিড়েছে বিভিন্ন স্থানে।
পাঠকের মতামত