কক্সবাজারে ‘মোবাইল ফোনে ধারণকৃত প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও’ না দেয়ায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদার ও বন্ধুকে কৌশলে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে আরেক বন্ধু। ওই বন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য র্যাব নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নটির উপ-অধিনায়ক মেজর মো. শরীফ আহসান।
তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ জুলাই সকালে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্ব পাশে হাত-পা বাধা অবস্থায় আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের ব্যবসায়ি এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে র্যাব অভিযান শুরু করে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত মো. নবী হোসেনের ছেলে।
ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. শাহেদ হোসেন (৩০) রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর শরীফ আহসান বলেন, ব্যবসায়ি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহেদ হোসেন পরস্পর ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু। শাহেদ হোসনের এক ভগ্নিপতিসহ তিনজনের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদরের লিংকরোড এলাকায় ভিশন কোম্পানীর ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের একটি শো-রুমের দোকান রয়েছে। গত ৭ জুলাই ব্যবসায়ি আবদুল্লাহ আল মামুনের লাশ উদ্ধারের পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামে র্যাব। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকালে লিংকরোড বাজার এলাকা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদার শাহেদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার ঘটনার মূল রহস্য বের হয়ে আসে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, “ জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ হোসেন তথ্য দিয়েছে, ঈদগাঁও উপজেলার জনৈক এক তরুণীর সঙ্গে শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শাহেদ হোসেন নিজের মোবাইল ফোনে দুইজনের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে রাখে। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে প্রেমিকা সামনা-সামনি এসে ওই ছবি ও ফুটেজ মুছে ফেলার জন্য তাকে ( শাহেদ ) চাপ দেয়। কিন্তু প্রেমিকার অজ্ঞাতে শাহেদ ওই ছবি ও ফুটেজ ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে সংরক্ষণ করে। পরে তিনি ( শাহেদ ) প্রেমিকার সামনে গিয়ে নিজের মোবাইল ফোন থেকে ওই ছবি ও ফুটেজগুলো মুছে ফেলেন। “
মেজর শরীফ আহসান বলেন, “ পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে শাহেদ হোসেন ওই ছবি ও ফুটেজগুলো ফেরত চায়। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টার পরও ছবি-ফুটেজগুলো ফেরত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহেদ হোসেন রেগে বসে। এক পর্যায়ে সে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। “
গ্রেপ্তার শাহেদের স্বীকারোক্তির বরাতে র্যঅবের এ কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা মতে গত ৬ জুলাই রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকাস্থ ভিশন শো-রুম থেকে মামুনকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বাহারছড়া বাজারে ডেকে নেয় শাহেদ। পরে ঈদগাঁওতে জরুরি কাজের কথা জানিয়ে একই মোটর সাইকেল যোগে দুইজনে রওনা দেয়। পথিমধ্যে তারা রশিদনগর ইউনিয়নের কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ হোসেন মোটর সাইকেলটি থামানোর জন্য বলে। এসময় আগে থেকে সেখানে উৎপেতে থাকা ৩/৪ জন দূর্বৃত্ত মামুনকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। পরে মামুনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দূর্বৃত্তরা শাহেদের কাছে তুলে দেয়।
মেজর শরীফ আহসান জানান, দূর্বৃত্তরা মামুনকে রশিদনগর ইউনিয়নের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার হাত-পা বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার শাহেদ হোসেনকে রামু থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত