সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার::
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট সন্তান। উখিয়ার ভোটের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য ও অপরাজিত একটি নামে পরিণত হয়েছেন। টানা ৪বার ভোট যুদ্ধে নেমে টানা ৪ বারই জয় নিজের দখলে রেখে দিয়েছেন তিনি। শত ঝড়-তুফান, বাধা-বিপত্তি, চক্রান্ত ও প্রসাদ ষড়যন্ত্র কোনটাই থামাতে পারছে না তার জয়রথ! তিনি একের পর এক প্রতিপক্ষকে সুকৌশলে কাবু করে জয়ের মালা ছিনিয়ে এনেছে বারবার। পাশাপাশি তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও প্রতিপক্ষ পরিবার গুলোকে কাগজের বাঘে পরিনত করেছে মেধা ও রাজনীতির প্রজ্ঞার মাধ্যমে।
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী রাজনৈতিক নেতা থেকে জননেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রথমবার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১ম বারই তিনি নির্বাচনে বাজিমাত করেন। রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৪ বারের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ভাই শাহ কামাল চৌধুরীকে পরাজিত করে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২য় বার সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর পুত্র তারেক মাহমুদ চৌধুরী রাজীবকে পরাজিত করে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৩য় বার সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ভাতিজা সাদমান জামী চৌধুরী কে পরাজিত করে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, শাহজাহান চৌধুরীর পরিবার নুরুল ইসলাম চৌধুরী (ঠান্ডা মিয়া চৌধুরী) পরিবারের মধ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে তেল পানির সম্পর্ক।
সর্বশেষ গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। এই নিয়ে টানা ৪বার ভোটের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে টানা ৪ বারই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন তিনি।
২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। ২০২১ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো জিতে বর্তমানেও এই পদে আসীন ছিলেন। উক্ত পদ থেকে স্বেচ্ছায় ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি স্বেচ্ছায় স্ব পদ থেকে পদত্যাগের করে একটি বিরল রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। ইতিপূর্বে ১৯৮৬ সালে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী স্বেচ্ছায় স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করে উখিয়া উপজেলা পরিষদের ১ম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাড়িয়েছেন। তিনি এখনো রাজনীতির মাঠে (দলীয় ও সাধারণ মানুষের ভোটে) কখনো পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন নি।
দলীয় রাজনীতিতেও তিনি এগিয়ে চলছেন বীরের গতিতে। উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব দলীয় রাজনীতিতে তার আবির্ভাব হলেও পরে ধারাবাহিক ভাবে রাজাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সেখানেও তাকে বারবার দলীয় কাউন্সিলারদের সরাসরি ভোটে মুখোমুখি হতে হয়েছে। এতেও তার বিজয় ঠেকাতে পারেনি কেউ। প্রতিবারই তিনি জয়ের মুকুট তার দখলে রেখেছেন।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পিতা হলেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী (ঠান্ডা মিয়া)। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়া পাড়া গ্রামে তার জন্ম। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একজন নীতিবান সমাজ সেবক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ২ মেয়ের জামাই সাবেক সংসদ সদস্য। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বড় মেয়ে জামাই হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজল্লাহ ফরিদ। তিনি টানা ২ বার সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ছোট মেয়ের জামাই হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনিও উখিয়া টেকনাফ আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আবদুর রহমান বদির স্ত্রী (নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট মেয়ে) শাহিন আক্তারও টানা ২ বারের বর্তমান সংসদ সদস্য। অর্থাৎ : নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবারেরই সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে তিন তিন জন সংসদ সদস্য। নুরুল ইসলাম চৌধুরী বড় ছেলে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী কক্সবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন । অপর ছোট ভাই জাফর আলম সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমও উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
পাঠকের মতামত