আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার)
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরের কয়েকটি গ্রাম থেকে গতকাল রোববার আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গতকাল রাত নয়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টায় থেমে থেমে শতাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মর্টার, গ্রেনেড ও বোমার পাশাপাশি যুদ্ধবিমানের উড়ে যাওয়ার শব্দও পেয়েছেন টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। এর আগের তিন দিন সীমান্তের ওপার থেকে এমন শব্দ শোনা যায়নি।
নাফনদীর তীরে টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ১৩টি গ্রাম এবং পাশের আলীখালী, লেদা, নয়াপাড়া, শালবাগান ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে দিবাগত রাত তিনটার পর থেকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ওপারে বিস্ফোরণ বন্ধ ছিল।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মংডু টাউনশিপের উত্তরে নাকপুরা, বলিবাজার, পেরাংপ্রু, কাওয়ারবিলসহ কয়েকটি গ্রামে গতকাল রাতে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাত চলমান রয়েছে। এসব এলাকায় দুই পক্ষ পরস্পরের ওপর হামলা ও পাল্টা হামলা করে যাচ্ছে।
টেকনাফের নাফ নদীর তীরে সীমান্তের ওপারে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে
টেকনাফের নাফ নদীর তীরে সীমান্তের ওপারে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছেফাইল ছবি
টানা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১০টির বেশি থানা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে টিকতে না পারে সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১৭৭ জন বিজিপি সদস্য। সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেফাজতে রয়েছেন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, তিন দিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ গতকাল রাত নয়টা থেকে ওপারে মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ শুনতে পাওয়া গেছে। তাতে এপারের হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপল্লি চৌধুরীপাড়া, ফুলের ডেইল, পুরানবাজার, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, খারাংখালী, মিনাবাজারসহ অন্তত ১৩টি গ্রামে এমন বিস্ফোরণ শোনা গেছে। রাত তিনটা পর্যন্ত এমন ১২১টির বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এপারের লোকজন।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত নতুন করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণে ঘটনা ঘটলেও টেকনাফ সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত