পলাশ বড়ুয়া:
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)’র হেফাজতে থাকা আটক রোহিঙ্গাদের এক নজর দেখতে রাস্তার ধারে বসে অপেক্ষা করছে স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মৈত্রি সড়কে বসে থাকতে দেখা গেছে।
তাদের একজন অপেক্ষারত নুরুল আলম। তার ফুফাত ভাইয়ের নাম হামিদ (১৬)। সে কুতুপালং লম্বাশিয়া ১নং ক্যাম্পের বাসিন্দা।
নুরুল আলমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে ৮/১০ ব্লক থেকে অন্তত ৩শ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ওপারে গেছে। সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে আঞ্জুমান পাড়ার সীমানা দিয়ে তারা পুনরায় এদেশে পালিয়ে আসে। তারা সেখানে কেন গেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর মেলেনি।
অপর একজন ইমাম হোসেনের স্ত্রী আলিমুন্নেসা। সে কতুপালং ক্যাম্প-২ এর এফডিএমএন। তিনি তার ছেলে মোহাম্মদ রফিক (১৯) এর জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করছে।
তিনি জানিয়েছেন, তার ছেলে এখানে ভাড়ায় ইজিবাইক চালাতেন। প্রায় ১০ দিন আগে তার ছেলে সীমান্তের ওপারে গেছে। কেন গেছে, কার সাথে গেছে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
একই ধরনের কথা বলেছেন রবি আলম আরেক রোহিঙ্গা। সে তার ভাই আবু সালেম ২৮ এর সন্ধানে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় পায়চারি করতে দেখা গেছে। সে কুতুপালং ক্যাম্প-৭ মোঃ সালেম এর ছেলে।
সূত্রে জানা গেছে, দশ পনের দিন আগে দুই হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রাতের আধাঁরে সীমান্তের ওপারে যায়। পরে তারা সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্র নিয়ে দেশে ফিরছিলেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ কালে অস্ত্রসহ ২৪জনকে জনতা আটক করে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিনের জিম্মায় রাখা হয়। পরে তাদেরকে বিজিবির হেফাজতে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়।
পালংখালী ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রোহিঙ্গাদের এপার থেকে ওপার অবাধ যাতায়াতের কারণে দিনদিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। স্থানীয় জনতা ২৪ জন সশস্ত্র রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। পরে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিকট সোপর্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলো আব্দুল্লাহ (১৮), আবু সালাম (৩১), মো. রফিক (২৪), শফিক আলম (২১), শমাসু (২৭), হাফেজ ফারুক (১৮)। বাকীদের নাম জানা যায়নি। এরা উখিয়ার কুতুপালং-বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাসিন্দা।
ওই সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি এস এমজি,১টি শুটার গান, ২টি মর্টার শেল, ৮টি ম্যাগজিন ও ২৫৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
থাইংখালীর রহমতের বিল গ্রামের নোমান বলেন, ২৪ জন যুবক একটি ডিঙি নৌকায় করে বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয়রা তাদের মিয়ানমারের পুলিশ মনে করেন। কিন্তু কাছে এলে দেখা যায় তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য।
সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হোয়াইক্যং এবং হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তবে গতকাল থেকে গোলাগুলি কিছুটা কমেছে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন বলেছেন, অনুপ্রবেশকারী যাদের আটক করা হয়েছে অস্ত্রসহ তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখনো তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়নি।
পাঠকের মতামত