শহিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকজন অন্যত্রে সরে যাচ্ছে। মিয়ানমারের ছোঁড়া গুলিতে চারবাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।এর মধ্যে দুইজন নারী।অপর দুইজন পুরুষ।দুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।দুই দফায় ১৯জন মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। তাদের ব্যবহারকৃত পোশাক ও অস্ত্র বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)র হেফাজতে রাখা হয়েছে।তবে তাঁদের প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিরস্ত্র করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমধুম-তুমব্রু বাজারের কোন দোকান পাট খোলা হয়নি।প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি।মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অন্তত ৫০ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।সীমান্তের ওপার থেকে আসছে টানা বিস্ফোরণের শব্দ।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রাথমিক স্কুল ও একটি মাদ্রাসা। সব মিলে চরম আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
বিজবির পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করার কথা থাকলে ও সীমান্তের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারনে বাতিল করেন।
তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন তিন দফায় মিয়ানমারের ওপারে হেলিকপ্টার আসে।সেখান থেকে ভারী গোলা নিক্ষেপ করেন।এতে হতাহত হতে পারে। সীমান্তের পরিস্থিতি নাজুক।
একই গ্রামের বোরহান আজিজ বলেন গতকাল শনিবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে সংঘর্ষ। মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষের কারনে এপারে ভয়ে দোকান পাট বন্ধ করে দেন।
এদিকে উখিয়ার বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন রাতভর গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারেনি।
অপরদিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী,রহমতের বিল,ফারির বিল ও আন্জুমান পাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের প্রচন্ড সংঘর্ষ চলছে। একারনে সীমান্তের বসবাসকারী লোকজনের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন গোলাগুলির শব্দ শুনেছি।
এ ব্যাপারে ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানএকে এম মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন মিয়ানমারের বিস্ফোরণের শব্দ আবার আসা শুরু করে শনিবার বিকালে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওপার থেকে বিস্ফোরণে শব্দ এসেছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ বলেন সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।
তিনি আরো বলেন সীমান্তের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিজিবির কক্সবাজারস্থ ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল আশরোকি বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে রাত থেকে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে কয়েকজন বিজিপি সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের বিজিবির ঘুমধুম সীমান্ত বিওপিতে রাখা হয়েছে। বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র ও গুলি বিজিবির কাছে জমা রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে ওপারে। ঘুমধুমের পরিবেশ থমথমে, আতঙ্কে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়েছে।
ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বলেন, রাতভর গোলাগুলি চলেছে ওপারে। গোলাগুলির শব্দে মানুষের মনে ভয়-আতঙ্ক তো হবেই। তবে যেকোনও পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
পাঠকের মতামত