প্রকাশিত:
নভেম্বর ২৮, ২০২৩ ১:২৫ পিএম
প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে অবৈধভাবে অনুমোদনবিহীন জাহাজ চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল করা ফিটনেসবিহীন সব জাহাজ ও নৌযানের বিষয়ে অনুসন্ধান করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নৌপথ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ- কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জোসনা পারভীন।
এর আগে রোববার (২৫ নভেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে অবৈধভাবে অনুমোদনবিহীন জাহাজ চলাচল বন্ধে হাইকোর্টে রিট করেন রামপুরার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে অবৈধ জাহাজ চলছে শিরোনামে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের বলা হয়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে কয়েকটি জাহাজ।নিয়ম লঙ্ঘন করে এসব জাহাজ চলাচলের কারণে মিয়ানমার সীমানা এলাকায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এতে করে ভরা পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এই রুটে চলাচল করার উপযোগী নয় এমন দুটি জাহাজ গত দুই বছর ধরে চলাচল করছে।এসব জাহাজের বেক্রসিং সনদ বা সমুদ্রসীমা অতিক্রম সনদ নেই। এসব জাহাজ নদীপথে চলাচলের অনুমোদন থাকলেও একটি চক্র কমদামে ভাড়া করে অধিক লাভের আশায় বঙ্গোপসাগরের মতো উত্তাল সমুদ্রপথে জাহাজ পরিচালনা করে আসছে।
জানা গেছে, নদীতে চলাচলের জন্য তৈরি করা জাহাজ, বিভিন্ন তথ্য গোপন করে একটি অসাধু চক্র বঙ্গোপসাগরের মতো উত্তাল পথে (টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে) পর্যটকদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকা শর্তেও আইনের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ পরিচালনা করে আসছে।এসব অবৈধ জাহাজ চলাচলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে মিয়ানমার সীমান্তে বড়ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এতে করে কক্সবাজারের পুরো পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুত্রে জানায়,টেকনাফ-সেন্টমার্টিন এ নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন নামের এ দুটি জাহাজ মুল মালিকের পরিবর্তে টেকনাফের বাসিন্দা আজিজুর রহমান সহ একটি সিন্ডিকেট এ জাহাজ দুটি পরিচালনার করে যাচ্ছেন।তারা অধিক লাভের আশায় নিয়মিত না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করছেন।
অনেক সময় এ জাহাজ সাগরের মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে,এবং মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝপথে চড়ে আটকে গেছে বহুবার।এবং এ জাহাজ দু’টি পর্যটক নিয়ে আসা-যাওয়ার করার সময় অন্য জাহাজের সাথে প্রতিযোগীতা শুরু করেন।
অনেক পর্যটক তার নির্ধারিত সীটে বসার টিকেট কাটলেও জাহাজে গিয়ে দেখা যায় ওই টিকেটের সীটে আরেকজন বসে আসে।পরে এ নিয়ে জাহাজ কতৃপক্ষের সঙ্গে পর্যটকদের মধ্যে তর্কবির্তক হয়েছে।এমন ঘটনায় পর্যটকদের মাঝে দেখা দিত আতঙ্ক।এবং এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জাহাজের অনিয়মের বিষয়ে কোন স্টাফ কথা বলতে চাইলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়।তাই জাহাজের কোন স্টাফ এ সিন্ডিকেটর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনা।তারা স্থানীয় প্রশাসনকে মেনেস করে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।এ মৌসুমে এ জাহাজ দুটি সহ এমভী বারো আউলিয়া নামের আরো একটি জাহাজ চলাচল করছে।
এ নৌপথে গত বছর সেন্টমার্টিন ভ্রমণ শেষে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাটে ফেরার পথে পর্যটকবাহী জাহাজ বে-ক্রুজের স্টাফদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকজন শিক্ষার্থী।এঘটনায় টেকনাফ থানায় মামলাও হয়েছে।
এ নৌপথে যাত্রীবাহী স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত কাঠের ট্রলার চলাচল করলেও অনেক সময় দেখা যায় বেশিরভাগ স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত কাঠের ট্রলার গুলোতে অদক্ষ ড্রাইভার ধারা এগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন মালিক পক্ষ।এমন ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যটক,স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকসহ ২৪ জন যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট টেকনাফের সার্ভিস ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের জেটিঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়।সমুদ্রের গোলগড়া নামক এলাকায় বোটটি ডুবে গেলে সেন্টমার্টিন ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক এক মহিলা মেম্বার ফিরোজা বেগমের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মো. আদনান চৌধুরী বলেন,এ রিট সম্পর্কিত কোনো বিষয় আমার জানা নেই।তবে রিটের বিষয়ে আদালতে আদেশ হাতে পেলে আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানায়।
পাঠকের মতামত