মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই::
কাপ্তাই উপজেলাধীন রাইখালী ইউনিয়নের দুর্গম ভালুকিয়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন দশক (৩০ বছর) অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়টি আজও এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের অত্যন্ত দূর্গম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকা এই জনপদের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় কিছু বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি ১৯৯৪ সালে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রতিষ্ঠা প্রায় তিন দশক হলেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দেওয়া যৎসামান্য বেতনে শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী মেটানো হচ্ছে। যা বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে খুবই সামান্য।
বর্তমানে শিক্ষকরা যে সম্মানী পায় তা তাদের সারা মাসের শেষে যাতায়াত ভাড়াও হয় না বলে জানান শিক্ষকরা। অথচ এই এলাকার আশেপাশের ৬ থেকে ৭ কিঃ মিটারের মধ্যে কোন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই এলাকার গরীব ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হয়।
সূত্র আরও জানায়, এই স্কুলের শিক্ষকদের অর্থের যোগান দিতে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে অর্থ ও এক মুষ্টি চাউল উত্তোলন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম মাত্র সম্মানীর মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে।
এছাড়া ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো অত্যন্ত দুর্গম তিনছড়ি, পূর্ণবাসন, মিতিয়াছড়া, পানছড়ি, লাম্বাছড়া, নোয়াপাড়া, কালা মইস্যা, বটতলী, গংগ্রীছড়া, বাদামছড়ি, ছাকুয়াপাড়া সহ পাহাড়ি এলাকা। যেখানে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এই একটি মাত্র বিদ্যালয়। তবে গত বছর বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হওয়ার আশা থাকলেও হয়নি। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সুব্রত বড়ুয়া জানান, ১৯৯৪ সালে ভালুকিয়া এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রয়াত গোপাল চন্দ্র তনচংগ্যার উদ্যোগে তার নামীয় ১ দশমিক ৬০ একর জায়গা বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সেসময় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ওইসময় বিনা বেতনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা শুরু করেন দুলাল চন্দ্র তনচংগ্যা ও পরিমল তালুকদার। প্রথমদিকে মাত্র ৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ৯৪ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। ২০০১ সালে বিদ্যালয়টি রেজিষ্টার ভুক্ত হয়।
তিনি আরও জানায়, ২০১৩ সালের দিকে জননেতা দীপংকর তালুকদার এমপি মহোদয় সহ গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে স্কুলটি এমপিওভুক্ত করার জন্য বক্তব্য প্রদান করি। কিন্তু অদ্যাবধি স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হয়নি। স্কুলটি এমপিও ভুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি কুতুবী ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি বর্ন বিকাশ তনচংগ্যা জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণীভেদে মাসিক ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা বেতন নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন শিক্ষকের মাসিক সম্মানি মেটানো হলেও তা খুবই নগন্য। যদি স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়, তাহলে সকলের দুঃখ লাগব হবে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রাক্তন সভাপতি ও কাপ্তাই ইউসিসিএ লিমিটেড (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান স্বপন বড়ুয়া বলেন, খুব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, উক্ত বিদ্যালয়টি এখনও এমপিও হয়নি। বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলাতে নন এমপিও বিদ্যালয় শুধু মাত্র ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। তাই উক্ত বিদ্যালয়কে এমপিও করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সন্তোষ বড়ুয়া বলেন, আমরা অনেক দূর্গম এলাকায় বসবাসের কারণে সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে আমাদের অনেক ৮ থেকে ১০ কিঃ মিঃ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয়।
আমাদের বিদ্যালয় হতে শিক্ষা অর্জন করে অনেকে উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো পদে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে আমাদের বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় কাপ্তাই উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
বিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং দুর্গম এলাকায় শিক্ষার প্রসারে বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
গত ১৭ জুলাই সোমবার বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে। তিনি জানান, দুর্গম এই অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে এই বিদ্যালয়টি অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি এসে জানতে পারলাম বিদ্যালয়টি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। সরকার যেহেতু প্রতি বছর অনেক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করছেন, তাই বিদ্যালয়টি যাতে এমপিওভুক্ত হয়, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে আমরা চিঠি দিব।
পাঠকের মতামত