রামু প্রতিনিধি::
কক্সবাজারের রামুতে খাদ্যে বিষ মিশিয়ে উন্নত জাতের ৮টি ছাগল হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বসত বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে চিহ্নিত একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের উত্তর মিঠাছড়ি হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মোমিন মিয়ার ছেলে এনজিও কর্মী মো. মাঈন উদ্দিন মামুনের খামারে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রামু থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছেন খামার মালিক মামুন। এতে ২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- স্থানীয় মৃত নুর আহম্মদের ছেলে আলী আকবর ও মনজুর আলমের ছেলে আরফাছ মিয়া ফারুক।
লিখিত এজাহার ও বাদীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে- মো. মাঈন উদ্দিন মামুন উখিয়া শরনার্থী ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনতে ও শখেরবশে নিজের বসত ভিটায় দীর্ঘদিন ধরে উন্নত জাতের ছাগল লালন-পালন করে আসছেন। গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি কর্মস্থল থেকে ফিরে দেখতে পান ১৯টি ছাগলের মধ্যে ৮টি মৃত এবং অন্যান্য ছাগলগুলোও ছটফট করছে। এসময় রামু উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের চিকিৎসদের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টার পর অবশিষ্ট ছাগলগুলোকে সুস্থ করেন। এসময় চিকিৎসকরা জানায় ৮টি ছাগল বিষক্রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে। মারা যাওয়া ৮টি ছাগলের আনুমানিক মূল্য ২ লাখ টাকা।
মাঈন উদ্দিন মামুন আরও জানান- ঘটনার পর এ ঘটনায় কারা জড়িত তা তিনি শনাক্ত করতে পারেননি। তবে তিনি ওই সময় জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয়দের জিজ্ঞাষাবাদে অভিযুক্ত আরফাছ মিয়া ফারুক নিজে গিয়ে বিষ মিশিয়ে ৮টি ছাগল হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। আরফাফ মিয়া ফারুক আরো জানায়- প্রধান অভিযুক্ত আলী আকবর তাকে (ফারুক) টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ছাগলের খাবার খাওয়ার পাত্রে বিষ মিশিয়ে দেয়ার জন্য ইন্ধন দেয়।
পরে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে বৈঠকেও ডাকলেও অভিযুক্ত আলী আকবর নানান রকম তালবাহানা করে কৌশলে সাড়া দেননি । পরে বিবাদী আলী আকবর ও তার সহায়তাকারিরা নানাভাবে বাদীকে হুমকি প্রদান করে। তাই খামারের মালিক মাঈন উদ্দীন মামুন নিরুপায় হয়ে ২৯ এপ্রিল রামু থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার এএসআই ইয়াছিন গত শনিবার, ২৯ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ফারুক এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের ভ‚মিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মাঈন উদ্দিন মামুন। চিকিৎসকের আপ্রাণ চেষ্টায় তার অবশিষ্ট ছাগলগুলো প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু আইনী প্রতিকার পেতে পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপার জানতে চাইলে অভিযুক্ত আরফাছ মিয়া ফারুক জানান- আলী আকবর তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগলের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে বলেছিলো এবং এই অন্যায়কাজে সরাসরি লিপ্ত ছিল। না বুঝে তিনি এ অন্যায় কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি এখন অনুতপ্ত। তিনি আরো জানান- আমি বিশ মিশিয়ে দেয়ার কথা ও অন্যান্য তথ্য স্বীকার করার পর থেকে আলী আকবর আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে মারধর, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকী দিচ্ছে। এ কারনে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ঘটনায় তাঁর (ফারুক) মা দিলোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আলী আকবর ও তার সহযোগীদের জন্য গত ২৮ এপ্রিল রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানান- বিষক্রিয়ায় ৮টি ছাগলের মৃত্যুর বিষয়টি সত্য। তবে কারা জড়িত তা এখনো স্পষ্ট নয়। শুনেছি ছাগলগুলোর মালিক মামুন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাঠকের মতামত