মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া:
বছর পার না হতেই আবার জেব্রার ঘরে এলো আরেক নতুন অতিথি। এখনও সদ্য জন্ম নেয়া জেব্রার বাচ্চার নামকরণ করা হয়নি। বাবা-মাসহ জেব্রা দলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কের বেষ্টনি এলাকায়। বাবা-মাকে এক মুহুর্ত্বের জন্যও ছাড়তে রাজি না সদ্যজাত এই বাচ্চা। এর আগে গত বছরের জুন মাসে জন্ম নেয়া ‘বিজয়’ নামের আরেক জেব্রার শাবক। কক্সবাজারের চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের জেব্রার বেষ্টনিতে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সর্ব দক্ষিণে জেব্রার বেষ্টনি। একসাথে ঘুরছে-ফিরছে ও খেলা করছে জেব্রার দল। এদের সাথে লাফালাফি করছে সদ্যজাত জেব্রা। দর্শনার্থী দেখলে জেব্রার বেষ্টনিতে লাফালাফি বেড়ে যায়। জেব্রার বেষ্টনির কেয়ারটেকার রাজিব।
প্রতিবেদকসহ বেষ্টনিতে ঢুকেই ডাক দেয়া হয় জেব্রাদের। সাথে সাথে ছুটে আসে জেব্রার দল। তবে, বেষ্টনি থেকে ফেরার সময় তাদের খাদ্য না দেয়ায় খুব অভিমান করেছে রাজিবের সাথে।
জেব্রার বেষ্টনির দায়িত্বরত কেয়ারটেকার রাজিব বলেন, জেব্রাগুলো পার্কে আনার পর থেকে আমার পরিচর্যায় রয়েছে। আমার সারাদিন তাদের সাথেই সময়কাটে। তাদের প্রতিদিন দুই বেলা করে খাবার দেয়া হয়। সদ্য জন্ম নেয়া জেব্রার বাচ্চা তার মা ও বাবার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মার থেকে দুধ খাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের গম, ভুট্টা, শসা, গাজরসহ সবজি জাতিয় খাবার দেয়া হচ্ছে। ওরা আমার ডাক শুনলেই বুঝতে পারে। জেব্রার দল গহীন বনের ভিতরে থাকলেও, আমি ডাক দেয়ার সাথে সাথে চলে আসে। তারা অনেকটা আমার সন্তানের মতো হয়ে গেছে।
জেব্রাদের অভিমানের কথা জিজ্ঞেস করলে রাজিব বলেন, একটু আগে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের খাবার খাইয়ে বের হয়েছি। তারা মনে করেছে আবারও খাবার দেয়ার জন্য ডাক পড়েছে। খাবার না দেয়ায় অভিমান করেছে।
সাফারি পার্ক সুত্রে জানা গেছে, পার্কে বিশাল এলাকা নিয়ে জেব্রার বেষ্টনি নির্মিত হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে বেষ্টনি হওয়ায় প্রায় সময় এরা গহীণ জঙ্গলে থাকে। শুধুমাত্র খাবার খেতে বেষ্টনির ভিতর স্থাপন করা খাবারের বেষ্টনিতে ছুটে আসে তারা। ওই সময়টাতে জেব্রার দলকে দর্শনার্থীরা দেখার সুযোগটা থাকে বেশি। বর্তমানে পার্কে পাঁচটা জেব্রা রয়েছে। গত মার্চ মাসের ১১ তারিখ জন্ম নেয় সদ্যজাত জেব্রার বাচ্চা। বেশ কিছুদিন পার্কের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠায় গত ২ এপ্রিল তাকে জেব্রার বেষ্টনিতে দেয়া হয়েছে। এখন ছোট-বড় মিলে ছয়টি জেব্রা পার্কে রয়েছে।
চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের ১৭ মে মাসে বেনাপোল বর্ডার থেকে ৬টি জেব্রা জব্দ করে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩টি পুরুষ এবং ৩টি মহিলা জেব্রা ছিলো। পরে এই ছয়টি জেব্রা গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রাখা হয়। এর একমাস পর জেব্রা ৬টি কক্সবাজারের চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
এই ৬টি জেব্রার থেকে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই মাসে এবং একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনটি জেব্রা মারা যায়। এরপর ৩টি জেব্রা অবশিষ্ট থাকে। পরবর্তীতে এদের মধ্য থেকে আরও ১টি বাচ্চা জন্ম নেয়।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসের ১১ তারিখ জেব্রার ঘরে আরেক নতুন অতিথি আসে। জন্ম নেয়ার পর থেকে অসুস্থ থাকায় বেশ কয়েকদিন সদ্য জন্ম নেয়া জেব্রার বাচ্চাকে পার্কের হাসপাতালের চিকিৎসকের পরিচর্যায় ছিলো। কয়েকদিন আগে ওই জেব্রার বাচ্চাকে বেষ্টনিতে দেয়া হয়েছে। এর এখনও নামকরণ করা হয়নি। সবমিলিয়ে বর্তমানে পার্কে ৬টি জেব্রা রয়েছে। এদের মধ্যে ২টি পুরুষ ও ২টি মহিলা এবং ২টি বাচ্চা। বাচ্চাদেও এখনও লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়নি। সর্বশেষ জন্ম নেয়া জেব্রা শাকব অন্যান্য জেব্রাদের সাথে খেলছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জেব্রা মুলত দলগত প্রাণী। এরা সাধারণত একতাবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। এদের প্রতিদিন দুই বেলা করে ভুট্টা, ভুষি, গাজর খেতে দেয়া হয়। এছাড়াও সারাদিন নিজেদের বেষ্টনিতে ঘুরে ঘুরে ঘাসও খাচ্ছে। যাতে তারা কোন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেজন্য প্রতিদিন খাবার দেয়ার স্থানে জীবাণু ছিটানো হয়।
পাঠকের মতামত