সোয়েব সাঈদ, রামু ::
কক্সবাজারের রামুতে ‘বিজিবির সাথে গরু চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দোকান কর্মচারির মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি; তবে নিহত ব্যক্তিকে চোরাকারবারি চক্রের সদস্য বলে দাবি বিজিবির।
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউপি’র ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, রবিবার বেলা ১২ টায় নিহতের মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত আব্দুর জব্বার (৪০) রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি নির্মাণ সামগ্রীর দোকান কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেন। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সময় সংঘর্ষের মাঝে পড়ে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামশুল আলম জানিয়েছিলেন, ” শনিবার রাতে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা গরুর একটি চালান জব্দ করে বিজিবির একটি দল। এসময় পাচারকারিরা জব্দ করা গরুগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তারা বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে একজন নিহত এবং তিনজন আহত হন। ”
রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, রাতে রামু উপজেলার পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় গরু পাচারকারিদের সাথে বিজিবির মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশ খবর পায়। পরে ওসি সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন যান।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি টান্টু সাহা বলেন, রামুতে বিজিবির সাথে গরু চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। মরদেহটি রাতভর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিল। পরে রবিবার সকালে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বিজিবির সদস্যরা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, রবিবার বেলা ১২ টায় নিহত আব্দুর জব্বারের মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে লাশটি বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। এরপর লাশ এলাকায় নিয়ে এসে স্বজনদের তুলে দেওয়া হয়েছে। ররিবার বিকালে আছরের নামাজ শেষে নিহতের মৃতদেহ স্থানীয় কবরস্তানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় এ ইউপি সদস্য।
এদিকে রবিবার সকালে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, ” শনিবার রাতে সীমান্তের চোরাই গরু জব্দ করে টহল দল পায়ে হেঁটে ফেরার সময় কাউয়ারখোপ এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০ হতে ৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেলসহ বিজিবি টহল দলের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ এবং বিজিবির ৪ সদস্য গুরুতর আহত হন। ”
আহতরা হলেন- বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্য হাবিলদার মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, নায়েক মো. লুৎফর রহমান ও নায়েক মো. আবুল কালাম। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আহত অপর বিজিবির সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিজিবির বার্তাটিতে আরও বলা হয়, ” ঘটনার সময় টহলদল সরকারী জানমাল রক্ষার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হলে একজন চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় একনলা বন্দুক, ১টি কিরিচ ও ১টি দা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও বলা হয়েছে। “
পাঠকের মতামত