রোহিঙ্গারা বলছে পরিকল্পিত নাশকতা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ২ হাজার ঘর ভস্মিভূত, আটক-১
পলাশ বড়ুয়া ও শহীদুল ইসলাম::
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ঝুপড়ি ঘর ভস্মিভূত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত: ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট ও বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৌনে ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছে এটা পরিকল্পিত নাশকতা। ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে একজনকে সন্দেহজনক আটক করা হয়েছে।
রোববার (৫ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে বালুখালী ময়নারঘোনা ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে মুহুর্তেই ৯, ১০ ও ১২ নম্বর ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিকান্ডের পরপর ফায়ার সার্ভিসের ৯ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব।
তিনি জানান, আজ দুপুরে ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা দ্রুত অন্যান্য ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাণভয়ে ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়েছে। এছাড়াও ৫০টির মতো দোকান পুড়ে গেছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে তা নির্ণয় করা হবে।
উখিয়া স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগেছে। পৌনে ৬ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। শুরুতে উখিয়ার ২টি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে রামু ও টেকনাফ, কক্সবাজার, লোহাগাড়ার আরো ৭টি ইউনিট অংশ নেয়।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো রফিক বলেন, ‘হঠাৎ করে আগুন জ্বলে উঠে। আমরা স্বামী-স্ত্রী বেরিয়ে এসেছি। নাতীরা কোনদিকে গেছে জানিনা। বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পের একটি ঘরে প্রথম আগুনের ঘটনা ঘটে। বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা সবাই মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। তবে আগুনের তীব্রতা খুব বেশি।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। নাশকতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
৮ এপিবিএন এর সহকারী পুলিশ সুপার মো: ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে রোহিঙ্গা শেল্টার, লার্নিং সেন্টার ও মাদ্রাসা পুড়ে গেছে। তাদেরকে দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থা কর্তৃক খাদ্য সরবরাহ এবং থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত কী কারণে তা নিশ্চিত না হলেও সন্দেহজনক এক যুবককে আটক করেছে। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় দুই হাজারের মতো ঘর পুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন ১৫ জন রোহিঙ্গা। তখন ১০ হাজারের মতো রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে যায়। একই বছর বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালে আগুন লেগে ১৬টি কেবিন পুড়ে যায়। এরপর একই বছরের ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার শফিউল্লাহ কাটা নামে একটি শরণার্থী শিবিরে এক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০০ ঘর পুড়ে গিয়েছিল।
পাঠকের মতামত