প্রশাসনের নাকের ডগায় সওজের জায়গা দখল
সওজের উদাসীনতায় কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেহাত !
পলাশ বড়ুয়া::
কক্সবাজার উখিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গার উপর অবৈধভাবে পাকা দালান ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন প্রভাবশালী মহল। দায়িত্বশীলদের নিরবতার কারণে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে পানি চলাচলের গতিপথ ভরাট করার কারণে প্রতিবৎসর বর্ষা মৌসুমে খাদ্য গুদাম ও খেলার মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা প্রশাসনের গেইটে ব্যস্ততম জায়গায় সওজের জায়গা দখল করে বাস স্টেশন করায় তীব্র যানজটের কারণে স্থানীয়দের জনজীবন হুমকিতে ফেলেছে জবরদখলকারীরা। এদিকে জনদূর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে সরেজমিনে দেখা গেছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের গেইটের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন শাহ আলমের তত্বাবধানে সন্তোষ কিচেন, নুর মোহাম্মদ বাদশা নেতৃত্বে সী-লাইন অফিস এবং সড়কের পূর্ব পাশে নুরুল আলম সওদাগরের পরিচালনায় সী-কেয়ার ল্যাব এবং তৎসংলগ্ন আরোটি ৩/৪টি দোকান নির্মাণ করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও খাদ্য গুদাম সংলগ্ন রয়েছে একাধিক দোকান।
চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো: পারভেজ মজুমদার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের ১৯৯৪-৯৫খ্রি: এর ৯৬০ নং গেজেট মূলে ১৯৯৫খ্রি: ১৬/৯৩-৫৪-৫৫ ভূমি হুকুম দখল নথিমূলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য সংরক্ষিত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ওয়ালাপালং মৌজার ৬৬৭০, ৬৬৭১, ৬৬৭৫ দাগান্দরের জায়গা গুলো জনৈক নুরুল আলম, শাহ আলম ও হেলাল উদ্দিন গং দীর্ঘদিন যাবত জবর দখল করে ভোগ করে আসছে।
অথচ ৬৬৭০ দাগে ১৫ শতক, ৬৬৭১ দাগে ০৮ শতক এবং উখিয়া খাদ্য গুদাম রোড সংলগ্ন ১১ শতক জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্পত্তি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সন্তোষ কিচেন এর পরিচালক শহর মুল্লুকের ছেলে শাহ আলম বলেন, সরকারের প্রয়োজনে এক সময় মাটির নেওয়ার জন্য হুকুম দখল করেছিল। সরকারের যা দরকার ছিল তা রেখে আমার নামে বিএস খতিয়ান হয়েছে ৬ শতক। অপর এক দাগে ৮ শতক। সরকারের আমাদের জায়গা নিয়েছে। আমরা সরকারের জায়গা দখল করিনি। এমনকি উপজেলার প্রশাসনের রাস্তাটি আমার স্বত্ত্বদখলীয় জায়গার উপর দিয়ে করা হয়েছে।
তিনি এও বলেন, আপীল মামলা নম্বর ১১/৮৪-৮৫ নথিতে কক্সবাজারের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর এর ১৬/০৩/১৯৮৫ তারিখের দেয়া আদেশটি বাতিল করিয়া পূন: বিচারের জন্য ফেরত পাঠিয়েছিল। তিনি বলেন, সওজের জায়গা আমার দখলে নেই। দলিল এবং সামিলের খতিয়ান মূলে আমি আমার নিজ স্বত্ত্বদখলীয় জমির উপর স্থিত আছি। তৎমধ্যে রাজাপালং এর ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন গায়ের জোরে আমার নামীয় খতিয়ানের ৬৫৯৩ দাগের দাগের দক্ষিণাংশে ২ শতক জমি জবর করেছে।
এদিকে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনসংখ্যার সাথে ১২ লাখের বেশি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যানবাহন ও তীব্র যানজট। এরপরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
স্থানীয় পথচারী আবদুল আমিন বলেন, উপজেলা গেইটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে সড়কে সকাল-বিকাল তীব্র যানজট লেগে থাকে। যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একই ধরণের কথা বলেন শহীদুল ইসলাম, সিকান্দর আলী, মনিন্দ্র সহ অনেকে।
তারা এও বলেন, নিশ্চয় দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা থেকে বিরত রয়েছে সওজ কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব বলেছেন, যতটুকু জেনেছি এটা মূলত: সওজের জায়গা। তবে কোন স্থানে, কি পরিমাণ জায়গা
সওজ অধিগ্রহণ করেছিল তা খতিয়ে দেখতে হবে। কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহে আরেফীন বলেন, রাস্তার পাশে হওয়ায় সওজের জায়গা গুলো অনেক দামী হয়। তাই কিছু কুচক্রী মহল সওজের জায়গা দখলের চেষ্টায় রত থাকে। ইতিমধ্যে সওজ ৬০০ কিলোমিটার সড়কের ৭শ টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পাঠকের মতামত