নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনদিন অপরাধীদের নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে উঠছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। প্রতিদিন ক্যাম্প কেন্দ্রিক সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গা ও মাঝিরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে সন্ত্রাসীদের দমণ ও অপরাধ নির্মুল করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এর অংশ হিসেবে সোমবার ভোর থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্রসহ দুই জঙ্গী আটক করেছে র্যাব। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি জঙ্গি ও র্যাবের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তবে গোলাগুলিতে কেউ হতাহত হয়নি।
এ সময় নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে আটক করে র্যাব।
আটককৃতদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ২টি দেশিয় তৈরি অস্ত্র, ১১১টি কার্টুজ ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মইন।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বান্দরবানের পাহাড়ে এই জঙ্গি সংগঠন আস্তানা গড়ে তুলে প্রশিক্ষণ নেয়। পরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায় সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বাশার। পরে তারা উখিয়ার কুতুপালং ৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।
রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দিতে এসব সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আত্মগোপন করেছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে র্যাব।
উং কমান্ডার মইন বলেন, গত আগস্ট মাসে কুমিল্লা থেকে ৮ জন তরুণ হিজরতের নামে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। তাদের খোঁজতে র্যাব ফোর্স নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায়। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ওই সংগঠনের বেশ কিছু নেতৃত্বস্থানীয় কর্মীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এছাড়াও হিজরতের জন্য বের হওয়া নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকা থেকে ৫ জনকে আটক করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সামরিক শাখার আবুল বাশার ও বোমা বিশেষজ্ঞ তার তথ্য পাওয়া যায়।
র্যাব-১৫ এর মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম চৌধুরী সকালে জানান, ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ শীর্ষস্থানীয় এক নেতাসহ কয়েকজন সশস্ত্র সদস্য অবস্থান করার খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালায়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক প্রধান রনবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে আটক করা হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা চলে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবী করেছে। এর আগে শনিবার বেশ কিছু ক্যাম্পে আরসা প্রধান আতা উল্লাহ জুনুনি সহ ২৮জনের ছবি সম্বলিত বার্মিজ ভাষায় পোষ্টার সাটানো হয়। এতে তাদেরকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেন।
এসব পোষ্টার কারা লাগিয়েছে সে বিষয়ে তথ্য জানাতে পারেনি সাধারণ রোহিঙ্গা ও ক্যাম্প প্রশাসন। তবে ৮-এপিবিএন এর সহকারী পুলিশ মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, পোষ্টারের ওরা সবাই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।
পোষ্টার লাগানোর একদিন পর ক্যাম্প-১৮ তে আরসা সন্ত্রাসীরা ইসলামী মাহাজে অতর্কিত ১৫/২০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
হাকিম পাড়া ক্যাম্পের মো: হাবিব জানিয়েছেন ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। আতংকে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। এদিকে নব্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটকের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত তারা।
পাঠকের মতামত