শোকে ভাসছে পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ের ইতিহাসে ঘটে গেল ভয়াবহ নৌকা দুর্ঘটনা। পঞ্চগড় বাসি আজ নিস্তব্ধ। চারিদিকে যেন কান্নার রোল পড়েছে। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার আকাশ, বাতাস যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে ছোট্ট শিশুগুলোর আহাজারিতে। ছোট শিশুটি নতুন সাজে সেজে মায়ের সাথে যাচ্ছিল মহালয়ার পুজোতে। কিন্তু পথেই থেমে গেল যাত্রা। পুজো দেওয়া আর হলো না। কেইবা জানত মাঝ নদীতে থেমে যাবে তাদের জীবনের ঘনঘটা।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মারেয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌকা ডুবির শিকার শতাধিক যাত্রী বোঝাই করা একটি ট্রলার। জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া পুজো উপলক্ষে বোদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার করতোয়া নদীর ওপারে বদেশ্বরি মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
দুপুর দেড় টার দিকে মারেয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট থেকে নদীর ওপারে বদেশ্বরী মন্দিরে পুজোর উদ্দেশ্যে প্রায় শতাধিক যাত্রী ওই ট্রলারে উঠেন। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে রাওয়ানা হয়ে মাঝ নদীতে ট্রলারটি পনে ২ টার দিকে পানিতে ডুবতে শুরু করে। এমতাবস্থায় ট্রলারের বেশ কিছু যাত্রী নদীতে ঝাপ দেয়। মাত্র ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই শিশু সহ প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে পানিতে ডুবে যায় নৌকাটি ।
নৌকাটি ডুবে যাওয়ার এক পর্যায়ে নদীর তীরবর্তী সাধারণ লোকজন আহত ও নিহতদের উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও একদল ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে। পরে স্থানীয়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও ডুবুরি দলের যৌথ উদ্ধার অভিযানে প্রথমে বেশ কিছু জীবিত ব্যক্তি সহ ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরে ক্ষণে ক্ষণে আরো বেশ কয়েকটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত চার শিশু ও নারী সহ মোট ২৪ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর আহত ও নিহতদের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ।
এদিকে আহত ও নিহতদের দেহটি খুঁজে বের করার জন্য বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভির জমান স্বজনেরা৷ অনেকে আবার স্বজনদের কোন খোঁজ না পেয়ে এদিক ওদিক পাগলের ছুটোছুটি করছে। নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মরদেহ। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানান সকালেই।
অপরদিকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন কর্তৃক নৌকাডুবির ঘটনায় ও হতাহতের বিষয়ে যেকোনো তথ্য জানার জন্য নদীর তীর নিকটস্থ মারেয়া বামন হাটে জরুরী তথ্য সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে লাশ সৎকারের জন্য ২০ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, পঞ্চগড়ের এই ভয়াবহ নৌকা ডুবিতে শিশু ও নারী সহ নিহতদের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে ফার্য়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত