চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে নগরের কাজির দেউড়ি এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেওয়াকে ঘিরে এই সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। সেখানে একে অপরের ওপর চেয়ার নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।
হামলায় বিএনপি নেতা নাজিমুর রহমান, সৈয়দ আজম উদ্দিন, সালাউদ্দিন ও রিপনসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের আরেকটি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সত্তার, নাজিমুর রহমান ও সৈয়দ আজম উদ্দিনের। সভায় অ্যাডভোকেট আবদুস সত্তারকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে আহ্বান করা হলে প্রতিপক্ষ বাধা দেয়।
এর মধ্যে একজন চেয়ার নিয়ে তেড়ে আসেন। এ সময় অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের সংঘর্ষ হয়। পরে নগর বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর পুনরায় সমাবেশ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ আসলে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সড়কে দায়িত্ব পালন করেছিলো। বিএনপি’র লোকজন দলীয় কার্যালয় এবং মাঠে সমাবেশ করেছে। তাদের সমাবেশ মানুষের জানমালের কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। পুলিশ এসব বিষয় খেয়াল রেখেছিলো। তারা ভেতরে কী করছে তা দেখিনি।’
নগর বিএনপি’র সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে সামান্য সমস্যা হলেও আমরা নিজেরাই ঠিক করে ফেলেছি। সমাবেশের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।’
জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং তিন নেতাকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. কামরুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি’র সমাবেশে হামলা চালিয়ে বরকত উল্লাহ বুলুসহ নেতাকর্মীদের আহত করেছে। আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্রবিরোধী দল। তারা অতীতেও একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। এখনো তারা একই উদ্দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা সারা দেশে একই কায়দায় বিএনপি’র সমাবেশে হামলা করছে। পুরোপুরিভাবে উস্কানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বিএনপি’র পক্ষে গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে। ভয় পেয়েই তারা ভয় দেখাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয়ের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করছেন। তিনি এই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে আবার তাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও দিয়েছেন। সেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে বিএনপি জামায়াতের দোয়াও চেয়েছেন।
আমরা বুঝতে পারছি না, উনি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নাকি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি? একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে তিনি শুধু আচরণবিধিই লঙ্ঘন করেননি, নির্বাচনি আইন ভঙ্গ করে নিরপেক্ষতা হারিয়ে নির্লজ্জ দলবাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। যদি দলবাজি করতে হয় তাহলে চেয়ার ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিন। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামের ডিসিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
পাঠকের মতামত